১০০০ স্লুইজ গেট ভাঙা হবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, নেপথ্যে সন্দেশখালি
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি নিজে এখনও ফেরার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে থানায় দায়ের হয়েছে একাধিক FIR। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাঁকে গ্রেফতারের পথে কোনও বাধা নেই। একই সঙ্গে শাসক দলের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যেই তিনি গ্রেফতার হবেন। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর একাধিক শাগরেদ। তাঁদের বিরুদ্ধে জুলুমবাজির হাজারো অভিযোগের পাশাপাশি দায়ের হয়েছে গণধর্ষণের একাধিক অভিযোগ। এবার ধাক্কা নেমে এল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। চাষের জমিকে মাছ চাষের ভেড়ি বানাতে খালের জলের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে বানানো ১০০০ স্লুইস গেট(Sluice Gate) এবার ভেঙে ফেলা হবে। সেই সব অবৈধ স্লুইস গেট ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। আর তাতেই কার্যত সন্দেশখালির(Sandeshkhali) শেখ শাহজাহানের(Sheikh Sahajahan) সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ার সামিল হয়েছে। কেননা সেই সাম্রাজ্য শুধু উত্তর ২৪ পরগনা(North 24 Pargana) জেলার সন্দেশখালিতেই নয়, ছড়িয়ে আছে বসিরহাট মহকুমা(Basirhat Sub Division) জুড়ে।
সন্দেশখালির ঘটনায় যে গণরোষ উঠে আসছে তার নেপথ্যে রয়েছে গ্রামের পর গ্রামে উর্বর চাষের জমি নষ্ট করে সেখানে নোনা জল ঢুকিয়ে মাছ চাষের ভেড়ি বানানোর ঘটনা। অভিযোগ, শাহজাহানের নির্দেশে তার শাগরেদ উত্তম সর্দার, শিবু হাজরারা বিঘার পর বিঘা চাষযোগ্য কৃষি জমিকে কার্যত ‘বন্ধ্যা’ বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। ৩ লাখের জমি কৃষকের কাছ থেকে জোর করে ১০ হাজারে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে, কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেই জমিতেই গড়ে তোলা হয়েছে একের পর এক মাছের ভেড়ি। শুধুমাত্র সন্দেশখালি নয়, উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকায় এই অবৈধ কারবার চলছে। আর সবটাই হয়েছে জেলা প্রশাসন, সেচ দফতর আর রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে। রাজ্যের সেচ দফতরের গড়ে দেওয়া বাঁধ ভেঙে ছোট ছোট স্লুইজ গেট বানিয়ে খালের জলের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভেড়িতে নিয়মিত ভাবে টাটকা নোনা জলের জোগান দেওয়ার জন্য। শুধু সন্দেশখালিই নয়, বসিরহাট মহকুমার মিনাখাঁ, হাড়োয়া, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ব্লকে গ্রামের পর গ্রামে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
সন্দেশখালিতে গণরোষ সামনে আসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই বেআইনি ভেড়ি ব্যবসার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছিল রাজ্য প্রশাসন। আর সেখানেই সামনে এসেছে বসিরহাট মহকুমাজুড়ে প্রায় ১ হাজার বেআইনি স্লুইস গেটের অস্তিত্ব। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন কেন এই ঘটনা স্থানীয়, ব্লক, মহকুমা, জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের নজরে এল না? সেচ দফতরের কেউ কেন কিছু জানতে পারল না? কিন্তু এখন যখন গোটা ঘটনা সামনে এসেছে তখন আর কালক্ষেপ করতে চায় না রাজ্য প্রশাসন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই সব স্লুইস গেট ভেঙে দেওয়া হবে। সন্দেশখালির বিক্ষোভকারী এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক কুখ্যাত অপরাধীরা শাহজাহানের হাত ধরে মাছের ভেড়ি ব্যবসায়ে পা রেখেছেন। সেই ব্যবসার হাত ধরে তাঁরা কোটিপতি হলেও যাদের জমিতে সেই সব ভেড়ি হয়েছে তাঁরা কার্যত রাস্তার ভিখারি হয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকা সেই সব ‘দাদা’ হয়ে ওঠা কুখ্যাত অপরাধী আর তাদের ঘাতক বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে উঠতে পারেননি। তাই অবলীলায় সরকারি বাঁধ কেটে ছোট গেট তৈরি করে খালের নোনা জল পছন্দ মত জমিতে ঢোকানো হয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে।