‘আমায় ফিরতে দে, তারপর যা বলার বলব’, তিহার থেকে বার্তা কেষ্ট’র
নিজস্ব প্রতিনিধি: বীরভূম(Birbhum) থেকে দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। সেখানে পৌঁছয় না গ্রামের পুকুরের মাছ, বীরভূমের সন্দেশ। কিন্তু এত দূরে থাকলেও জেলার রাজনীতির খুঁটিনাটিতে নজর রয়েছে তাঁর। কোন নেতা কীভাবে ভোটে কাজ করলেন, কে কত টাকা খরচ করলেন, কোথায় কী মন্তব্য করলেন সবকিছুই রয়েছে তাঁর নখদর্পণে। আদ্যন্ত রাজনৈতিক বর্ণময় চরিত্রর দু’চোখ এখন সর্বক্ষণ টিভির পর্দায় যেন গেঁথে থাকে। দিদিমণি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, ভোট মিটলেই নাকি তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি যাতে ভোটে কাজ করতে না পারেন, তাই তাঁকে বাংলা থেকে বহু দূরে তিহারে(Tihar Jail) নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছে। তাই তিনিও আশায় আছেন, কিছু একটা শীঘ্রই হবে। আর তাই তাঁর সঙ্গে তিহারে দেখা করতে যাওয়া জেলার নেতাদের তিনি বার্তা দিলেন, ফিরে আসার, জানালেন, ‘আমায় ফিরতে দে, তারপর যা বলার বলব।’ তিনি অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol)। বীরভূম জেলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল(TMC) নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) প্রিয় ‘কেষ্ট’।
কিন্তু হঠাৎ করে এমন বার্তাই বা দিলেন কেন তিনি? প্রশ্নটা এখানেই। তিহারের জেলে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন কেষ্ট। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, নিজের রাজত্বপাটের কিছুই খবরাখবর পান না তিনি, রাখেন না তিনি। নিয়মিত টিভি দেখেন। সেখান থেকেই জেলার রাজনীতি, রাজ্য রাজনীতি, দেশের রাজনীতির হালহাকিকত জানতে পারেন তিনি। আর জানতে পারেন তাঁর সঙ্গে কোনও প্রয়োজনে দেখা করতে যাওয়া মানুষদের কাছ থেকে। জেলার নেতা থেকে আইনজীবীরা তাঁর সঙ্গে তিহারে দেখা করতে গেলেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খবর নেন সবকিছুর। রিপোর্ট নিচ্ছেন জেলার নেতাদের কে করছেন, কে কি বলছেন, কে কি ভাবছেন। আর সেখানেই কিছু বিদ্রোহের আভাস পেয়েছেন তিনি। ভুললে চলবে না, তিনি এখনও খাতায়কলমে জেলা তৃণমূলের সভাপতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও তাঁকে সেই পদে রেখে দিয়েছেন এবং সেখান থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেননি। কিন্তু কেষ্ট জানতে পেরেছেন, দিদিমণির এই সিদ্ধান্তের পরেও জেলার কিছু কিছু নেতা নিজেদের নিজের নিজের এলাকার স্বঘোষিত জমিদার ভেবে নিয়েছেন। সেখানে তাঁরা নিজেদের মতো করে দল চালাতে চাইছেন। এমনকি প্রকাশ্যে না হলেও চার দেওয়ালের অন্তরালের কেষ্ট’র বিরোধিতার পথেও হাঁটতে চাইছেন।
আর তার জেরেই তিহার থেকেই জেলায় বার্তা পাঠিয়েছেন কেষ্ট। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম কোনও লোকসভা ভোটে সম্পূর্ণ জেলার বাইরে রইলেন অনুব্রত মন্ডল। সক্রিয়ভাবে ময়দানে না থাকলেও ভোটের খোঁজখবর নেওয়া থেকে অনুগামীদের নির্দেশিকা দেওয়ায় কেষ্ট ছিলেন স্বমেজাজেই। এরই মাঝে আইনগত কারণে কয়েকজন আইনজীবী ও জেলার নেতারা তিহার জেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের এক নেতার সঙ্গে সম্প্রতি জেলে কিছুক্ষণ কথা হয় কেষ্টর। সেই নেতাই জেলায় ফিরে জানিয়েছেন, দলের কয়েকজন নেতার ওপর খুবই ক্ষোভ রয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির। বিশেষ করে যারা একসময় তাঁর কথায় উঠতো বসতো চলতো ফিরতো, তাঁরাই তিনি গ্রেফতার হতে সম্পূর্ণ ভোল বদলে দিয়েছে। আর তার জেরেই কেষ্টও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমায় ফিরতে দে, তারপর যা বলার বলব’।