ঋণের জন্য আবেদন ৪০০’রও বেশি, অথচ ৪০ শতাংশ ফ্ল্যাটই বেআইনি
নিজস্ব প্রতিনিধি: জীবনের সর্বস্ব পুঁজি দিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন বহু মানুষ। নতুন বাড়িতে প্রবেশের পর তাঁদের যাতে ‘গৃহহারা’ হতে না হয় তার জন্য বেআইনি নির্মাণ(Illegal Construction) নিয়ে একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বিধাননগর পুরনিগম(Bidhannagar Municipal Corporation) কর্তৃপক্ষ। কোনও গ্রাহককে ফ্ল্যাটের ঋণ(Loan for Flat) দেওয়ার আগে ব্যাঙ্কগুলি যাতে পুরনিগমে এসে বহুতল সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবর নেয়, এই মর্মে তাদের চিঠি পাঠিয়েছিল বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ। তারপর ব্যাঙ্কগুলি খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে। আর তার জেরেই এবার সামনে চলে এল একাধিক বেআইনি নির্মাণের ঘটনা। বিধাননগর পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ মাসে ৪০০’রও বেশি ঋণের আবেদনের তদন্ত করতে এসেছিল বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। সেই সূত্রেই Verification করে দেখা গিয়েছে, আবেদন করা প্রায় ৪০ শতাংশ ফ্ল্যাটই বেআইনি। এই নির্মাণগুলির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে বিধাননগর পুরনিগম কর্তৃপক্ষ।
বেশ কয়েকমাস আগে বিধাননগরে একাধিক বেআইনি ফ্ল্যাট ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাঁরা সেখানে বসবাসও করছিলেন তখন। ওই বিষয়টি সামনে আসার পর যারা ফ্ল্যাট কিনছেন, তাঁরা যাতে নতুন করে প্রতারিত না হন, তার জন্যই ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে তদন্তের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বিধাননগর পুরনিগম কর্তৃপক্ষ। কয়েকমাস আগে এ বিষয়ে বিধাননগরের একাধিক ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়েছিল ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ। তারপর ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার আগে পুরনিগমে এসে প্রতিদিনই বিল্ডিংয়ের প্ল্যান সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছে। তাদের তথ্য দেওয়ার জন্য পুরনিগম পৃথক ব্যবস্থাও করেছে। তাতে গ্রাহকদের আবেদন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা যাচাই করতে সরাসরি পুরনিগমে এসে জমা করছেন। তারপর সেগুলি তদন্ত ও ভেরিফিকেশন শুরু হচ্ছে। তাতেই এই বেআইনি নির্মাণ ধরা পড়েছে। ওই আবেদনগুলিও সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হচ্ছে। বহুতলগুলির নির্মাণকারীকে আইনি নোটিসও ধরানো হচ্ছে।
বিধাননগর পুরনিগমের দাবি, Verification’র সময় ওই ফ্ল্যাটগুলি বেআইনি চিহ্নিত না হলে যারা ওই সব ফ্ল্যাট কিনতেন, তাঁরা ভবিষ্যতে চরম বিপদে পড়তেন। ফলে শুধু বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া নয়, এর ফলে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। সাধারণত, প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। তাই বিদ্যুৎবন্টন সংস্থার কাছেও আবেদন করা হয়েছে সংযোগ দেওয়ার আগে তারাও যেন পুরনিগমের কাছে এসে বিল্ডিং বা বহুতল সম্পর্কে তথ্য নেয়। কেবলমাত্র আইনি বিল্ডিং বা বহুতলকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেআইনি নির্মাণ ধরা পড়লে বিদ্যুৎ সংযোগ যাতে না দেওয়া হয় সেটাও বলে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য গত ৯ মাসে বিধাননগর পুরনিগম এলাকায় ১৭৪টিরও বেশি বেআইনি নির্মাণের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১২টি নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে ফেলার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। পুলিশকেও তার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেগুলি ভেঙে ফেলা হবে।