বারাসতের কাজীপাড়ায় শিশু মৃত্যুতে ধৃত অভিযুক্তকে নিয়ে ঘটনার পুন: নির্মাণ করল পুলিশ
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতের কাজীপাড়ায় শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্তকে নিয়ে সোমবার ঘটনার পুন: নির্মাণ করল বারাসত থানার(Barasat P.S.) পুলিশ। ৯ই জুন, বারাসত কাজীপাড়ায় দোকানে খাবার কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় ১১ বছরের একটি শিশু। ১৩ তারিখ সেই শিশুর পচা গলা মৃতদেহ উদ্ধার হয় কাজীপাড়ায় একটি বাড়ির বাথরুম থেকে। এই ঘটনায় মৃত শিশুর নিজের জ্যাঠাকে গ্রেফতার করে বারাসত থানার পুলিশ। সোমবার দুপুর ১:৩০ নাগাদ পুরো ঘটনার অভিযুক্তকে নিয়ে পুন: নির্মাণ করে বারাসত থানার পুলিশ। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার,SDPO, বারাসত এবং মধ্যমগ্রাম থানার আইসি(IC)।বারাসতে কাজীপাড়ায় নিখোঁজ বাচ্চার দেহ উদ্ধারের পর ওই বাচ্চার জ্যাঠা আঞ্জীব নবিকে গ্রেফতার করে বারাসত থানার পুলিশ সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করে এই আঞ্জিব নবী(Anjib Nabi) মূল এবং একমাত্র অভিযুক্ত।
যখনই পুলিশ তদন্ত করতে গেছে তখনই বারবার পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন রকম ভাবে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কখনো ছেলে ধরা কখনো কিডনি পাচার নানারকম গুজব নবীর মস্তিষ্কপ্রসূত বলে দাবি বারাসতের পুলিশ সুপার(SP) প্রতীক্ষা ঝাড়খরিয়ার। একই সঙ্গে সে যেহেতু মসজিদে নামাজ পড়াতো সেই নামাজ পোড়ানোর পর প্রত্যেককে জানিয়েছে বাইরের লোক দেখলেই মারধর করতে হবে। তাতেই মানুষজন বাইরের লোককে দেখলেই উত্তপ্ত হয়ে মারধর করতে শুরু করে দিয়েছে।ঘটনার দিন সন্ধ্যা ছটা কুড়িতে ওই নিহত বাচ্চা বাড়িতে আসে। কিন্তু তারপর তাকে বাড়ির বাইরে বেরোতে কেউ দেখেনি। ওই এক মুহূর্তের ফাঁকে বাচ্চাকে ডেকে নিয়ে অন্ধকার বাড়ির পেছনে প্রথমে চড় এবং তারপর গলা টিপে খুন করে ওই পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে ঝুলিয়ে রেখে দেয়। পুলিশ বারবার ওই এলাকায় তদন্ত করতে গেলেও ওই বাড়ি ঝোপঝাড়ে ভরা থাকার কারণে ওই ঝোপঝাঁড়ের মধ্যে তল্লাশি করেনি বলে দাবি পুলিশের। সেই কারণেই নজরে আসেনি প্রথমে। বাচ্চার বাবা গোলাম নবী সেইদিন সাড়ে সাতটায় বাড়িতে আসে। তারপর বাচ্চাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু হয় আটটার পরে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গেছে ৬ঃ৪৫ থেকে ৭:৩০ এর মধ্যে ওই বাচ্চাকে খুন করা হয়েছে।
মোবাইলের টাওয়ার(Mobile Tower) লোকেশন অনুযায়ী আঞ্জীব নবী ওই সময় ওই এলাকাতে ছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে আঞ্জীব স্বীকার করেছে ভুল করে কাজ করে ফেলেছে। পরবর্তীতে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন এই সমস্ত ঘটনা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশ সুপারের।আঞ্জীব নবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অনুমান পারিবারিক সম্পত্তির বিবদের কারণেই ওই বাচ্চাকে খুন করা হয়েছে । আঞ্জীব নবি মূলত মসজিদে আজান দেয়। আর ছোট্ট একটি ব্যাগের দোকান আছে। যা থেকে তার সামান্য রোজগার। কাজীপাড়ায় (Kajipara)পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করার পর পুকুরপাড়ের একটি তালগাছ আছে তার। যার ফল বিক্রি করে তার একটা বার্ষিক ইনকাম আছে। হঠাৎই একদিন আনজিব নবী দেখতে পায় তার ভাই গোলাম নবী সে গাছে লোক তুলে তাল পারছে। তাই নিয়ে এই পর্যায়ে বিবাদ শুরু। আর সেই বিবাদে ফারদিন আঞ্জীব নবীকে মারতে গেছিল যা থেকেআঞ্জীব নবীর এই প্রতিহিংসার কাজ।
নিহত বাচ্চার বাবারা মোট সাত ভাই বোন। সকলে খোঁজাখুঁজি করলে ওই আঞ্জীব নবি খোঁজাখুঁজি না করার কারণে পুলিশের সন্দেহ দানা বাঁধে। যেহেতু রোজ আযান দিয়েছে নন্দগরে শ্বশুর বাড়িতে চলে যেত তাই তার মোবাইল টাওয়ার(Mobile Tower) লোকেশন ধরে পুলিশ দেখে তার গতিবিধি। বারবার মিথ্যা কথা বলা পুলিশকে বিভ্রান্ত করা এবং গুজব ছড়ানো শেষ পর্যন্ত এই কারণগুলোই আঞ্জীব নবীর ধরা পড়ার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশ যখন এক প্রকার দিশেহারা তখন ঘুরে তদন্ত শুরু করতে গিয়ে আঞ্জীবকে অভিযুক্ত ভেবে তদন্ত করতে গিয়ে দেখে সব মিলে যাচ্ছে। তবে প্রথম পর্যায়ে পুলিশের যে খানিকটা নেগলিজেন্সি হয়েছে তা কার্যত মানছেন পুলিশ সুপার।