আর নয় অতি শুভেন্দু নির্ভরতা, বঙ্গ বিজেপিতে পরিবর্তনের হাওয়া
নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের মানুষ ভোট দিয়ে কেড়ে নিয়েছেন বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। শ্লোগান ছিল, ‘আবকে বার ৪০০ পার।’ জনগণ সেই দৌড় থামিয়ে দিয়েছে ২৪০-এই। পদ্মের আসন কমেছে বঙ্গেও। আর তার জেরে এবার বঙ্গ বিজেপিতেও(Bengal BJP) পরিবর্তনের হাওয়া ঘুরতে শুরু করে দিয়েছে। যে বঙ্গ বিজেপিতে কোনঠাসা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছিলেন দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh), তিনি এখন আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। আবার যে শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari) বঙ্গ বিজেপির মুখ হয়ে উঠেছিলেন, সেই শুভেন্দু নির্ভরতা কাটিয়ে এবার সাবালক হতে চাইছে বঙ্গ পদ্মশিবির। কেননা এই সব পরিবর্তন এমনি এমনি হচ্ছে না। হচ্ছে শাহি নির্দেশে। সূত্রের দাবি, খোদ অমিত শাহ(Amit Shah) আগে যেভাবে শুভেন্দুকে কথায় কথায় গুরুত্ব দিতেন, এখন আর সেটা হচ্ছে না। এবার তিনিও বোধহয় নতুন কিছু ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। শাহি দরবারে কদর কমছে শুভেন্দুর। বঙ্গ বিজেপিকেও শুভেন্দু নির্ভরতা কমাতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে বলেই বাংলার পদ্মশিবির সূত্রে জানা গিয়েছে।
সেই শাহি নির্দেশ মেনেই শনিবার রাতে বঙ্গ বিজেপির বৈঠক বসেছিল খাস কলকাতায়, আর সেই বৈঠকে ছিলেন না শুভেন্দু। তিনি তখন কোচবিহারে। সেটাও আবার নাকি শাহি নির্দেশেই। আর শুভেন্দুকে ছাড়াই বঙ্গ বিজেপির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল। যা বলে দিচ্ছে, বাংলার পদ্মশিবিরের অন্দরে পরিবর্তনের হাওয়া ঘুরছে পূর্ণ স্রোতে। জানা গিয়েছে শনিবারের বৈঠকে হাজির ছিলেন দলের রাজ্য পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য, আশা লাকড়া, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar), দলের ৫ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় মাহাতো এবং দীপক বর্মণ। রাজ্য থেকে নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শান্তনু ঠাকুর। ছিলেন দিলীপ ঘোষও। সেই বৈঠক থেকেই আসন্ন ৪ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য ১২জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে। সেই ১২জনের নামের তালিকা যাচ্ছে দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
তবে সূত্রের দাবি, ওই ১২জনের মধ্যে ১জনও নাকি শুভেন্দু ঘণিষ্ঠ নয়। লোকসভা নির্বাচনে কিন্তু অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলায় অধিকাংশ প্রার্থীর নাম ও কে কোন আসনে লড়বেন তা ঠিক হয়েছিল শুভেন্দুর ইশারায়। সেই সিদ্ধান্ত মেনেই হয়েছিল শাহি পদক্ষেপ। এবার উল্টো হাওয়া। অনেকেরই দাবি, বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দুর আগমন দলের ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়েছে। আদি নেতাকর্মীরা বসে গিয়েছেন। তাঁদের সবার কার্যত এক যোগে অভিযোগ শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই। সেই ক্ষোভের রেশ পড়ছে লোকসভা নির্বাচনে। আর তাই খোদ অমিত শাহও নাকি শুভেন্দুকে নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছেন। যে শনিবারে কলকাতায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হচ্ছে, সেই দিনই শুভেন্দুকে শাহি নির্দেশে চলে যেতে হচ্ছে কোচবিহারে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের কোর কমিটির বৈঠকের ধারে কাছেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে। আগামী দিনে এই প্রবণতা বজায় থাকলে এটা ধরে নিতেই হবে, বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দু জমানায় ইতি পড়ে যাচ্ছে।