‘উন্নত’ মানের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যায় দেশে তৃতীয় বাংলা
নিজস্ব প্রতিনিধি: আবারও বাংলার(Bengal) মুকুটে জুড়ে গেল নয়া স্বীকৃতির পালক। এবারেও সেই স্বীকৃতি দিল কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের(Union Ministry of Health) তথ্য বলছে দেশের মধ্যে ‘উন্নত’ মানের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের(Better Quality Government Hospitals and Health Centers) সংখ্যায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বাংলা। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে তামিলনাড়ু ও গুজরাত। যখন নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের সঙ্ঘাত চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে, ঠিক তখনই বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কেন্দ্রের স্বীকৃতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে বইকি। কেননা ভুললে চলবে না সামনেই লোকসভার নির্বাচন। আবার বাংলার স্বাস্থ্য দফতর রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই। সেই স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরকাঠামোগত যাবতীয় উন্নয়নের কৃতিত্ব মুখ্যমন্ত্রীরই। কেননা তাঁর নির্দেশে ও পরামর্শেই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটেছে গত ১৩ বছরে। আজ সেই পরিকাঠামোগত উন্নয়নের স্বীকৃতি কেন্দ্রের তরফে দেওয়ার অর্থ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজকেই স্বীকৃতি দেওয়া।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের এই শংসাপত্র অর্জন করা মোটেই মুখের কথা নয়। জেলা, মহকুমা, সুপারস্পেশালিটি এবং স্টেট জেনারেল—এই চার ধরনের হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রায় ৪০ হাজার সূচক দেখা হয়! ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালের ক্ষেত্রে দেখা হয় ২৫-৩০ হাজার সূচক। প্রায় ১০ হাজার মানদণ্ড বিচার করা হয় সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ক্ষেত্রে। ভিন রাজ্যের পরিদর্শকরা খুঁটিয়ে দেখেন পরিষেবা ও অন্যান্য খুঁটিনাটি। তারপরই দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে এই গুণগত মানের National Quality Assurance Standards শংসাপত্র প্রদান করে কেন্দ্রীয় সরকার। জানা গিয়েছে বাংলার জেলা, মহকুমা, সুপারস্পেশালিটি, স্টেট জেনারেল, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালগুলি পরিদর্শনের সময় দেখা হয়েছিল ওই সব চিকিৎসা কেন্দ্রে সমস্ত পরিষেবা আছে, নাকি নেই। ওষুধ ও চিকিৎসার যন্ত্রপাতি আছে না নেই, সংক্রমণ মোকাবিলার ব্যবস্থা কেমন, রোগীদের ডায়েট, হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কেমন, চিকিৎসা পরিষেবার অবস্থা কেমন, নিয়ম মেনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে কিনা, যে কোনও ধরনের খামতি মেটাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ইত্যাদি।
এই সব কিছু খতিয়ে দেখে বাংলার ২১০টি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রকে শংসাপত্র দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। মজার কথা ২০২২ সালে বাংলার মাত্র ১৩টি সরকারি হাসপাতাল পেয়েছিল এই শংসাপত্র। অথচ ২০২৩ সালের জন্য এইবছর বাংলার ২১০টি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রকে এই শংসাপত্র দিয়েছে মোদি সরকার। কার্যত ১ বছরের মধ্যেই ১৬গুণ বৃদ্ধিই বাংলাকে দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বাধিক উন্নতমানের সরকারি হাসপাতালের উচ্চতায় তুলে ধরেছে। স্বাস্থ্য দফতর আশাবাদী আগামী বছর বাংলা আর তৃতীয় নয়, একদম প্রথম স্থানে উঠে আসবে। একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রে সরকারের আরও ২ শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যে সেরা রাজ্যগুলির সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিচ্ছে বাংলা। ২০২২ সালে রাজ্যের মাত্র ৬টি হাসপাতাল ‘লক্ষ্য’ শংসাপত্র পেয়েছিল। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৫টি। অন্যদিকে ২০২২ সালে একটিও সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ‘মুসকান’ শংসাপত্র ছিল না। সেখানে ২০২৩ সালে এই শংসাপত্র পাচ্ছে বাংলার ১১টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র।