বিহারে মদ খেয়ে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা অনেকটাই কমেছে, উঠে এল গবেষণায়
নিজস্ব প্রতিনিধি: চমকপ্রদ খবর! সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিহারে মদ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর মদ খাওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিককালে প্রায় ২৪ লক্ষের মতো কমে গিয়েছে, পাশাপাশি মদ্যপ ব্যক্তিদের তাঁদের স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালানোর ঘটনাও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথ ইস্ট এশিয়া জার্নালের গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, মহিলাদের উপর অত্যাচার চালানোর ঘটনাও ২১ লক্ষের মতো কমে গিয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, বিহারে এই আইনটি চালু হওয়ার দৈনন্দিন মদ খাওয়ার প্রবণতার ঘটনা প্রায় ২৪ লাখ কমেছে এবং মদ খেয়ে বা নানা কারণে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনাও ২১ লক্ষ কমেছে।
এমনকী মদ যারা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ১৮ লাখ মানুষের শারীরিক উন্নতি ঘটেছে। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের একটি দল জাতীয় ও জেলা-স্তরের স্বাস্থ্য এবং পরিবারের সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য দিয়েছে। সমীক্ষার এক গবেষকের লেখায় ফুটে উঠেছে যে, এই আইনের ফলে চালু হয়েছে কঠোর অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ নীতিগুলি। যা ঘন ঘন মদ্যপানকারী ব্যক্তি এবং মদ্যপ ব্যক্তিদের ঘন ঘন সঙ্গীদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলি কমিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে বিহার নিষিদ্ধকরণ এবং আবগারি আইন অনুযায়ী, গোটা বিহার রাজ্যজুড়ে অ্যালকোহলের উৎপাদন, পরিবহন, বিক্রয় এবং সেবনের উপর প্রায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আনা হয়।
ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-3, -4, এবং -5 থেকে ডেটা বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিহারে রাতারাতি এই কঠোর নিষেধাজ্ঞাটির ফলে জনজীবনেও অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে। কারণ আইনটি প্রণয়নের আগে, বিহারে ঘন ঘন অ্যালকোহল সেবনদের পরিমাণ ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছিল ১৫ শতাংশ আর প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে এর পরিমাণ ৭.২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছিল ১০.৩ শতাংশ৷ আর নিষেধাজ্ঞার পরে, এই প্রবণতাগুলি সম্পূর্ণ বিপরীত আকার ধারণ করেছিল। বিহারে কমপক্ষে সাপ্তাহিক অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ ৭.৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ১০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷
এদিকে বিহার নিষিদ্ধকরণ এবং আবগারি আইন চালু হওয়ার পর, বিহারে মহিলাদের বিরুদ্ধে শারীরিক সহিংসতার পরিমাণ প্রায় ৪.৬ শতাংশ কমেছে এবং যৌন সহিংসতার পরিমাণ ৩.৬ শতাংশ কমেছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পুরুষদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবের দিক সম্পর্কে, সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, কম ওজনের পুরুষদের ক্ষেত্রে চার শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে, এবং অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির প্রবণতার তুলনায় ৫.৬ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। গবেষকরা বলেছেন, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা নীতি-নির্ধারকদের জন্য ফলাফলগুলি মূল্যবান হবে।