শুভেন্দু-অগ্নিমিত্রার ‘খলিস্তানি’ মন্তব্যে ব্যাকফুটে বিজেপি, নিন্দা দেশজুড়ে
নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালিকে ক্রমশ উত্তপ্ত করে তোলার গেম প্ল্যান নিয়ে বাম-বিজেপির যাত্রা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছে লোকসভা নির্বাচনের আগে ঠিক কীভাবে বাংলাকে উত্তপ্ত করে তোলার প্রয়াস চলছে। কিন্তু সেই প্রয়াসে বালি ফেলে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari) এবং বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল(Agnimitra Paul)। সন্দেশখালি(Sandeshkhali) যাওয়ার পথে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার ধামাখালিতে রাজ্য পুলিশের(West Bengal State Police) ইনটালিজেন্স ব্রাঞ্চের স্পেশ্যাল সুপার(Special Superintendent of Intelligence Branch) জশপ্রীত সিংকে(Jashpreet Singh) ‘খলিস্তানি’ বলে যে কটাক্ষ(Khalistani Remarks) তাঁরা করেছেন তা এখন রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও বিজেপিকে রাতারাতি ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমনকি শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ বাংলা সহ দেশের নানা প্রান্তের শুভেন্দু-অগ্নিমিত্রা-বিজেপির মুন্ডপাত করে আন্দোলনও শুরু করে দিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে বঙ্গ বিজেপি কার্যত কোনও নেতাই এখন আর এই ইস্যুতে শুভেন্দু ও অগ্নিমিত্রার পাশে নেই। কেউ তাঁদের হয়ে একটা শব্দও খরচ করছেন না। কার্যত দুইজনই বঙ্গ বিজেপিতে(Bengal BJP) একরকম একঘরে হয়ে পড়েছেন।
‘খলিস্তানি’ বিতর্কে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ যেভাবে রাতারাতি বাংলা থেকে দেশজুড়ে আন্দোলনে নেমে পড়েছেন তা রীতিমত অভূতপূর্ব। এর আগে বিজেপির বিরুদ্ধে কখনই বাংলার মাটিতে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের এভাবে আন্দোলনে নামতে দেখা যায়নি। দেশজুড়েও গতকাল থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এদিনও চলবে। দাবি শুভেন্দু-অগ্নিমিত্রার ‘খলিস্তানি’ মন্তভ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং শুভেন্দু ও অগ্নিমিত্রাকে গ্রেফতার করতে হবে। এই দাবি যে পূরণ হওয়ার নয় সেটা প্রায় সবাই জানেন। তবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। সেই সূত্রে রাজ্য প্রশাসন শুভেন্দু ও অগ্নিমিত্রার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করে তা দেখার বিষয়। যদিও শুভেন্দু ও অগ্নিমিত্রা দুইজনই দাবি করেছেন তাঁরা ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য করেননি। এই নিয়ে দুইজনই ট্যুইট ও করেছেন। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভিজছে না। সব থেকে বড় কথা বিজেপির কোনও নেতা এগিয়ে এসে তাঁদের হয়ে কোনও সাওয়াল করছেন না। তবে বিজেপির আইটি সেল পুরাতন ঘটনার ফুটেজ তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ‘শিখ বিরোধী’ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তাতে লাভ বিশেষ কিছু হচ্ছে না।
সব থেকে বড় কথা যে সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে তাতে করে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। কেননা দিল্লিতে কৃষকদের যে আন্দোলন হচ্ছে তার বেশিরভাগ মুখই শিখ সম্প্রদায়ের। সেই আন্দোলন নিয়ে দিল্লি হাইকোর্ট রাস্তা অবরোধ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেও আন্দোলন বিরোধী কোনও নির্দেশ দেয়নি। আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ারও নির্দেশ দেয়নি। এদিনও দিল্লি মুখী হবেন আন্দোলনরত কৃষকেরা। সেই প্রেক্ষাপটে ‘খলিস্তানি’ মন্তব্য ইস্যু কার্যত আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। শুভেন্দু-অগ্নিমিত্রা যতই দাবি করুন না কেন, বিজেপির কোনও নেতানেত্রী তাঁদের হয়ে ব্যাটন ধরতে এগিয়ে আসেননি। বঙ্গ বিজেপি কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে। শুভেন্দু ও অগ্নিমিত্রা নিজেদের যেভাবে নির্দোষ বলছেন সেই সুরে সুর মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপির একজন নেতাও কিছু বলছেন না। সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডা। যদিও এই ইস্যুতে শুভেন্দু বা অগ্নিমিত্রার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনা প্রবাহ বলে দিচ্ছে এই ইস্যুতে শুভেন্দু-অগ্নিমিত্রার পাশে নেই বঙ্গ বিজেপির কোনও নেতা।