‘CAA অসাংবিধানিক, আবেদনের আগে বারবার ভাববেন’, শিলিগুড়িতে বার্তা মমতার
নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা ভোটের(General Election 2024) মুখে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা CAA দেশজুড়ে লাগু করে দিয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। তার জেরে দেশজুড়ে ছড়িয়েছে উদ্বেগ, চিন্তা, আশঙ্কা, আতঙ্ক। সেই ছবি ধরা পড়ছে উত্তরবঙ্গের বুকেও। কেননা উত্তরের জেলাগুলিতে বসবাস করা সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি মতুয়া ও রাজবংশীদেরও অনেকেরই পূর্বপুরুষদের শিকড় ওপার বাংলায়। আবার পাহাড় ও ডুয়ার্সে বসবাস করা লেপচা, গোর্খা, খাম্পাদের পূর্বপুরুষদের শিকড় রয়ে গিয়েছে নেপাল, ভূটান, তিব্বতে। তাই এই CAA-কে ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে তাঁদের মধ্যেও। সেই আশঙ্কার চোরাস্রোত এদিন বাগডোগরায় পা রাখার আগেই টের পেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। কেননা ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ এবং ‘দিদিকে বলো’ এই দুটি জায়গাতেই অনেক ফোন এসেছে উত্তরবঙ্গ থেকে। আর তাই এদিন বিকালে শিলিগুড়ির(Siliguri) দীনবন্ধু মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় ও সমতলকে দিলেন শান্তির বার্তা, একতার বার্তা, পাশে থাকার আশ্বাস বার্তা।
কার্যত গতকাল থেকেই উত্তরবঙ্গজুড়ে উচ্ছ্বাস অপেক্ষা উদেগের ছবিই বেশি ধরা পড়েছে। কেউ কেউ উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আবার কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট আইন লাগু নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। সবমিলিয়ে ভোটের ময়দানে উত্তেজনা ছড়ানোর আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। উত্তরের জেলাগুলিতে বসবাস করা কয়েক হাজার পরিবারের হাতে তাঁদের বসবাসের জমির বা বাড়ির কোনও নথি নেই। CAA-কে নিয়ে এখন তাঁরাই সব থেকে বেশি আতঙ্কিত। এদের এদিন আশ্বাস দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এই সব পরিবারগুলি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করলেও জমি ও বাড়ির নথি তৈরি করে উঠতে পারেননি। এরাই এখন ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এই অমোঘ আবহেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী নানা জনজাতির প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। নানা জনজাতির উন্নয়নের জন্য তিনি যে সব বোর্ড গড়ে দিয়েছেন তাঁদের প্রতিনিধিদেরও এদিনের বৈঠকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। আর সেই বৈঠক থেকেই তিনি দিয়ে দিয়েছেন শান্তির বার্তা। একতার বার্তা। CAA’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা। বিপদের দিনে মানুষের পাশে থাকার বার্তা।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, ‘CAA অসাংবিধানিক। এই অসাংবিধানিক আইনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে NRC-ও। ভুলেও কেউ এই আইনের সাহায্য নেবেন না। কেউ আবেদন করবেন না। আবেদন করলেই আপনাদের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেবে। আপনাদের জমি, বাড়ি, সম্পত্তি সব। আপনাদের ভোটাধকার, বেঁচে থাকার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, কাজ করার অধিকার, সব কেড়ে নেবে। আপনার নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে আপনাকেই অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে। তাই CAA-তে আবেদনের আগে বারবার ভাবুন। একবারের জায়গায় হাজারবার ভাবুন। CAA অধিকার কেড়ে নেওয়ার আইন। আমি মানুষের অধিকার রক্ষায় জীবন দিতে তৈরি। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি, আমি কাউকে বাংলা থেকে তাড়াতে দেব না। কেউ বঞ্চিত হলে তাঁকে আমি আশ্রয় দেব।’