অধীর অতীত, সংসদে কাছাকাছি আসছে কংগ্রেস-তৃণমূল
নিজস্ব প্রতিনিধি: এদিন অর্থাৎ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের অধিবেশন(Parliamentary Session)। আর সেই অধিবেশনকে কেন্দ্র করেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে ফের কাছাকাছি আসছে কংগ্রেস(INC) ও তৃণমূল(TMC)। অষ্টাদশ লোকসভার নির্বাচনের(Loksabha Election 2024) পর এদিনই প্রথম সংসদ বসতে চলেছে। আর এদিন থেকেই তৃণমূল সহ INDIA জোটের অনান্য শরিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ শুরু করতে চলেছে কংগ্রেস। একের পর এক রেল দুর্ঘটনা, একাধিক সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিয়ে বিজেপিকে চেপে ধরতে চায় কংগ্রেস। সেই কাজে তৃণমূল সহ INDIA জোটের অনান্য শরিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণের ধার ও ভার দুই বাড়াতে চাইছেন সোনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি ও মল্লিকার্জুন খাড়গে। এদিন ঠিক বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ INDIA’র শরিক দলগুলির সাংসদেরা হাতে সংবিধান নিয়ে একত্রে সংসদের ২ নম্বর দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। এই একত্রে প্রবেশ কার্যত সংসদ শুরুর দিন থেকেই বিজেপিকে বিপক্ষ জোটের শক্তি নিয়ে বার্তা দেওয়ার সামিল। ফলে তৃতীয়বার জিতে এসেও অধিবেশন শুরুর আগে রীতিমতো ব্যাকফুটে বিজেপি নেতৃত্ব।
দেশ থেকে বিজেপির শাসন দূর করতে লোকসভা নির্বাচনের বেশ কয়েক মাস আগে দেশে তৈরি হয় INDIA জোট। সেই জোটে রয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। আছে বামেরাও। যদিও লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৩ দল এক হয়ে লড়াই করেনি। জোট হয়েছিল বাম আর কংগ্রেসের মধ্যে। তৃণমূল একাই লড়াই করেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূলের এই একা লড়াই করার নেপথ্যে ছিল বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের মাখামাখি। বাংলায় এই দুই দলের জোট পছন্দ করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি কংগ্রেসকে ২টি আসন ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন যা তাঁরা উনিশের লোকসভা ভোটে জিতেছিল বাংলা থেকে। আর সেই ২ আসন হল দক্ষিণ মালদা ও বহরমপুর। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর অন্ধ মমতা আর তৃণমূল বিরোধিতার জেরে এবং তাঁর প্ররোচনায় রাহুল গান্ধির আসন নিয়ে এককাট্টা মনোভাবের জন্য বাংলার মাটিতে কংগ্রেসের সঙ্গে আর জোট হয়নি তৃণমূলের। তার জেরে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের আসন বেড়ে ২৯ হলেও কংগ্রেসের আসন ২ থেকে কমে ১ হয়েছে। হেরেছেন অধীর নিজেও। একই সঙ্গে গোটা ৫-৬ আসনে কংগ্রেসের ভোট কাটার জন্য হেরেছে তৃণমূল, আর সেখানে জিতেছে বিজেপি।
বাংলার বুকে এই ফলাফলই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের অধীর প্রীতি ঘুচিয়েছে। শোনা যাচ্ছে অধীর নাকি এখন অস্থায়ী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তিনি নিজেই নাকি ইস্তফা দিয়েছেন যা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড গ্রহণ করেছে। আর তাই এবার অধীরকে অতীত করে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে কংগ্রেস পাশে পেতে চাইছে তৃণমূলকে। একই সঙ্গে এবারে দুর্বল এনডিএ সরকারকে সংসদের অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই আক্রমণের পথে এগোনোর কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। এদিন ও আগামিকাল সাংসদদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। তা মিটে যাওয়ার পরেই স্পিকার নির্বাচন। কারও কারও মতে, প্রোটেম স্পিকার নির্বাচন নিয়ে এদিন থেকেই হট্টগোল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সংসদে। কেন সবচেয়ে বেশি বার জিতে আসা সাংসদ কংগ্রেসের কে সুরেশকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হল না, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হবে কংগ্রেস সহ INDIA জোটের শরিক দলগুলি। তবে অনেকের মতে, মূল সংঘাত লাগবে স্পিকার নির্বাচনের দিন থেকে। অতীতের ১৭টি লোকসভাতে বিনা নির্বাচনে, সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা এ বার শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছেন। তলে তলে যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
দিন কয়েক আগে নবান্নে মমতার সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেসের নেতা তথা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সেই সাক্ষাতের পরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যেকার শীতলতা অনেকটাই কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন নৈকট্য বাড়ছে দুই শিবিরের। যা গত পর্বে সে ভাবে দেখা যায়নি। বিশেষ করে তৃণমূল আসন সংখ্যা বাড়িয়ে লোকসভায় ফেরার পরে কংগ্রেস নেতৃত্বও চাইছেন আগামী দিনে যাতে সংসদে সুষ্ঠু যুগলবন্দি করে শাসক শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলা যায়। উভয়েই যে পরস্পরের প্রতি আস্থা রেখে এগোতে চায়, সেই বার্তা দিয়েছে দুই শিবিরই। পাশাপাশি, তৃণমূলের ধাঁচে দণ্ডসংহিতা আইন নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেসও। বিরোধীদের বক্তব্য, গত অধিবেশনে যে ভাবে ১৪৬ সাংসদকে সাসপেন্ড করে ওই আইন পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শপথগ্রহণের বিষয়টি শেষ হলেই, অন্য দলগুলিকে পাশে নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া মঞ্চের সব শরিক দলকে সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে সংসদে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান তাঁরা।