মেদিনীপুরে টিকিট পাচ্ছেন না দিলীপ, প্রার্থীপদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা ভারতীর
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি ছিলেন বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) সফলতম সভাপতি। এখনও আছেন। কেননা তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড এখনও ভেঙে ফেলতে পারেননি সুকান্ত মজুমদার। আগামী দিনেও সেই রেকর্ড কেউ ভাঙা তো দূরের কথা কোনওদিন কেউ ছুঁতে পারবেও কিনা সন্দেহ। কেননা তাঁর আমলেই বাংলার মাটিতে বিজেপির উত্থান চোখে পড়ার মতো। কার্যত ঐতিহাসিক বললেও কম বলা চলে। কারণ তিনি যখন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন তখনই হয়েছিল উনিশের লোকসভা এবং একুশের বিধানসভা নির্বাচন। সেই দুই নির্বাচনে বাংলার মাটি থেকে বিজেপি জিতে নিয়েছিল ১৮টি লোকসভা কেন্দ্র এবং ৭৭টি বিধানসভা কেন্দ্র। অথচ সেই ইর্ষানীয় সফলতার পরেও তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পদ থেকে। শুধু সরিয়ে দেওয়াই নয়, তাঁকে কার্যত দলের মধ্যেই কোনঠাসা করে দেওয়া হয়। তাঁর অনুগামীদের যাবতীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় দলের পুরাতন রাজ্য দফতরে থাকা তাঁর ঘর। আর এবার তো তাঁর জেতা লোকসভা কেন্দ্রও তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে তাঁরই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। এখানে দিলীপ ঘোষের(Dilip Ghosh) কথাই বলা হচ্ছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারে আর মেদিনীপুর লোকসভা(Midnapur Constituency) কেন্দ্র থেকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না দিলীপবাবুকে। পরিবর্তে সেই কেন্দ্রে সম্ভবত টিকিট পেতে চলেছেন প্রাক্তন IPS আধিকারিক ভারতী ঘোষ(Bharati Ghosh)।
এর আগে বিজেপি দুই দফায় দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোনও দফাতেই মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। আর তাতেই দানা বেঁধেছিল প্রশ্ন, তাহলে কী দিলীপকে আর টিকিট দিতে চাইছেন না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? যদিও দিলীপ বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই একাধিকবার জানিয়েছেন, তিনি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকেই লড়াই করবেন। কিন্তু এদিন সেই হিসাবও আর মিলছে না। কার্যত ভোটের লড়াইয়ে, ভোটের ময়দানে, বিনা যুদ্ধেই নিজের আসন ছেড়ে দিতে হচ্ছে দিলীপকে আর সেটাও তাঁরই দলের গোষ্ঠীবাজির জন্য। নোংরা কদর্যময় ক্ষমতালিপ্সুদের লড়াইয়ের জন্য। এর মধ্যে বড় রকমের কিছু পরিবর্তন না ঘটলে ভারতীর হাতেই উঠতে চলেছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হওয়ার টিকিট। পরিবর্তে দিলীপকে প্রার্থী করা হতে পারে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্র থেকে। সেক্ষেত্রে এবার এস এস আলুওয়ালিয়ার নাম বাদ পড়তে পারে, যিনি ওই আসনের বর্তমান বিজেপি সাংসদ। মনে করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহেই বাংলার বাকি কেন্দ্রগুলির নাম ঘোষণা করে দিতে পারবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে দিলীপের পরিবর্তে ভারতী মেদিনীপুর থেকে প্রার্থী হলে দিলীপের অনুগামীরা তাঁকে কতখানি সমর্থন জানাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
উনিশের ভোটযুদ্ধে দিলীপ মেদিনীপুর থেকে জিতেছিলেন প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কিন্তু একুশের ভোটযুদ্ধে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে কেবলমাত্র ১টি আসনে জয়ী হয় বিজেপি। সেই আসন হল খড়গপুর টাউন। সেখান থেকে জয়ী হন টলি তারকা হিরণ। তাঁকে এবার এবার ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে বাংলার আরেক টলি তারকা তথা তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী থুড়ি দেবের বিরুদ্ধে। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা বাকি ৬টি আসনে একুশের ভোটে ফুটেছিল ঘাসফুল। এই ৬ কেন্দ্র হল – এগরা, দাঁতন, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, খড়গপুর রুরাল এবং মেদিনীপুর। কার্যত এই ফলাফলের জেরে অনেক আগেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, দিলীপ নিজে উনিশের ভোটে যেখানে প্রায় ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন, সেখানে মাত্র ২ বছরের মধ্যে তৃণমূল ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে কীভাবে জিতে যায়। আর তার পরে পরেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, এবারে অর্থাৎ ২৪’র ভোটে(Loksabha Election 2024) আর হয়তো দিলীপকে টিকিট দেওয়া হবে না। যদিও সূত্রের খবর, দিলীপকে একেবারেই কেটেছেঁটে ফেলে দিতে চাইছেন না পদ্মের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই মেদিনীপুরের পরিবর্তে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকেই তাঁকে প্রার্থী করছে পদ্মশিবির।
তবে দিলীপের বেশ কিছু অনুগামীর দাবি, ‘দাদা শেষ পর্যন্ত ভোটে নাও লড়াই করতে পারেন। যদিও এর পাল্টা মতও শোনা যাচ্ছে। আর তা হল - দিলীপ মনে করেন ব্যক্তির থেকে সংগঠন বড়। তার থেকেও বড় রাষ্ট্র। এমন নীতিতে বিশ্বাস করা দিলীপ নিশ্চয়ই ভাবেই দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপদাকে যে আসনেই পাঠাক, তিনি লড়বেন। জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই দিলীপ তাঁর আসন পরিবর্তনের জল্পনা নিয়ে দলের ভিতরে উষ্মা প্রকাশ করছিলেন। ভোট লড়তে হলে সেটা শুধু মেদিনীপুর থেকেই— এমন জেদও ধরে ছিলেন। কিন্তু এখন নাকি দিলীপ অনেকটাই ‘নমনীয়’ হয়েছেন। তাঁকে মেদিনীপুর না দেওয়া এবং বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে দেওয়ার পিছনে দলের যে যুক্তি, তা মেনে নিয়েছেন বলেই জানা গিয়েছে। ফলে একেবারে শেষবেলায় নাটকীয় কোনও বদল না হলে দিলীপের আসনবদল এক রকম পাকা বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।