টাইরড ভাঙা অবস্থায় যাত্রী নিয়ে দুর্গাপুর থেকে দৌড় সরকারি বাসের
নিজস্ব প্রতিনিধি: বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচলেন দুর্গাপুর(Durgapur) থেকে কলকাতা(Kolkata) মুখী দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার(SBSTC) একটি বাসের ২২জন যাত্রী। কেননা সামনে এসেছে শুক্রবার সকালে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাস স্ট্যান্ড(City Center Bus Stand) থেকে শক্তিগড় পর্যন্ত যাত্রীসমেত কলকাতামুখী দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাস টাইরড ভাঙা অবস্থায় জাতীয় সড়ক ধরে শক্তিগড় পর্যন্ত এসেছে। এই টাইরড হল স্টিয়ারিং ও সামনের চাকার সংযোগকারী লোহার দণ্ড। অর্থাৎ বাসটি যে কোনও সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারতো। সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার, বাসটি চালাবার সময় চালক এই বিষয়টি জানতেই পারেননি। কিন্তু বাসটি যা ভাঙা টায়রড(Broken Tie Rod) নিয়ে ছুটছে তা জানতে পেরে দুর্গাপুরের ডিপো থেকে ফোন আসে বাসের চালকের কাছে। তড়িঘড়ি শক্তিগড়ে দাঁড় করানো হয় বাসটি। পরে সংস্থার অন্য একটি বাসে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায়। কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি।
জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে সারাদিনে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার শতাধিক বাস ছাড়ে নানা রুটে। আবার আসানসোল, কুলটি, রানীগঞ্জ, জামুড়িয়া, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে ছাড়া নানা দূরপাল্লার সরকারি বাসও এই বাসস্ট্যান্ড ছুঁয়ে যায়। তবে দুর্গাপুর থেকে যে সব বাস ছাড়ে সেগুলি ছাড়ার আজ্ঞে বেনাচিতির কাছে থাকা ট্রাঙ্ক রোড ডিপো থেকে পরীক্ষা করানোর পর সিটি সেন্টার বাস স্ট্যান্ডে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দেয় বাসগুলি। বৃহস্পতিবার রাতে WB 39B 8331 নম্বরের বাসটি পরীক্ষা করে সংস্থার মেকানিকরা লগবুকে লিখে দেয় যে টাইরড ভেঙে গিয়েছে। মেরামত করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, শুক্রবার সকালে লগবুক না-দেখে বাসটিকে স্ট্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে সকাল ৬টার সময়ে ছাড়ে বাসটি। যাত্রীদের নিয়ে বাস যখন বর্ধমানে সেই সময়ে ট্রাঙ্ক রোড ডিপো থেকে ফোন করে চালককে জানানো হয় যে বাসের টাইরড ভাঙা। সেই ফোন কলেই বাস দাঁড় করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার জেরে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৮২ কিমি দূরে শক্তিগড়ে কোনওরকমে বাসটি দাঁড় করান চালক।
বাস থেকে নেমে টাইরডের অবস্থা দেখে চোখ কপালে ওঠে চালক প্রসেনজিৎ মণ্ডলের। পরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘চাকার অ্যাক্সেলের সঙ্গে কোনওরকমে আটকে ছিল টাইরড। বাকি অংশ ভাঙা। চলন্ত অবস্থায় টাইরড ভেঙে গেলে যে কী হতো ভেবে পাচ্ছি না। স্টিয়ারিংয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণই থাকত না। বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে অগিয়েছেন সকলে।’ তবে এই ঘটনার জন্য ডিপো কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন চালক ও কন্ডাক্টর। অথচ গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ ডিপো ইনচার্জ তাপস মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘বাসের টাইরড মেরামত করার দরকার ছিল ঠিকই। তবে ওই অবস্থায় বাস চালানো যেত।’ তা হলে বাসটি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো কেন? তাপসের দাবি, ‘মেরামত করার জন্য দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ কলকাতা থেকে ফিরে আসার পরেও তো মেরামত করা যেত। মাঝরাস্তায় যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে মেরামতের প্রয়োজন হলো কেন? এই প্রশ্নের আর কোনও উত্তর দিতে পারেননি ডিপো ইনচার্জ। যদিও সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘ডিপো ইনচার্জ সঠিক বলছেন না। কার গাফিলতিতে মেরামতের আগেই বাসটি ডিপো থেকে বেরিয়ে গেল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর তদন্তের রিপোর্ট আমাকে দেবেন। তার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’