হঠাৎ কেন চিঠি দিলেন শাহ, নেপথ্যে কী ২৪’র অঙ্ক
কৌশিক দে সরকার: কুণাল ঘোষকে(Kunal Ghosh) পাঠানো শাহের চিঠি(Letter from Amit Shah) রাজ্য রাজনীতিতে তো বটেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও ঝড় তুলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে কুণালের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে কেন চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অমিত শাহ। তাও সেটা ৩ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে। সাধারণত, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার বাংলা থেকে সরকারি ভাবে পাঠানো কোনও চিঠির জবাব দেওয়া তো দূর তার প্রাপ্তি স্বীকারও করে না। কোনও দাবিদাওয়াও চট করে মানে না। সেই জায়গায় শিশির অধিকারীর সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে কুণাল ঘোষের CBI তদন্ত চেয়ে চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার অবশ্যই জল্পনার জন্ম দেবে, এবং দিচ্ছেও। এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে উঠে এসেছে কেন চিঠির উত্তর দিলেন শাহ। এটা কী নিছকই চিঠি, নাকি প্রচ্ছন্ন কোনও বার্তা বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP), তৃণমূল(TMC) এবং অবশ্যই কংগ্রেসকে!
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, শাহ কার্যত এক ঢিলে দুটি পাখি মেরেছেন। প্রথমত, শুভেন্দু অধিকারী তথা বঙ্গ বিজেপিকে প্রচ্ছন্ন সতর্ক বার্তা এবং দ্বিতীয়ত, জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলকে বার্তা। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বঙ্গ বিজেপির একটা বড় অংশই ক্ষুব্ধ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি দলে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন। স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সব সময় দলের নীতি আদর্শ মেনেও কাজ করছেন না। তাঁর জন্য দলের আদি নেতাকর্মীদের একতা বড় অংশই হয় বসে গিয়েছেন নাহয় দল ছেড়ে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি এটাও ইদানিংকালে রীতিমত প্রকট হয়ে গিয়েছে যে, শুভেন্দুকে এড়িয়ে চলছেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। একই সঙ্গে প্রকট হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির বেহাল দশাও। শুভেন্দু মুখে যতই বড় বড় দাবি করুন না কেন, তিনি আজ অবধি বিজেপিকে বাংলার মাটিতে কোনও জয়ের মুখ দেখাতে পারেননি। উল্টে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, দলকে বিভ্রান্ত করা এবং ছত্রখান করে দেওয়ার। শাহের চিঠি কার্যত এই অবস্থায় শুভেন্দুকে প্রচ্ছন্ন ভাবে সতর্ক করে দেওয়ার পদক্ষেপ। যাতে তিনি দলের সবাইকে নিয়ে চলেন। অন্যথা তিনিও দিল্লিতে বসে আঙুল বেঁকাতে পিছুপা হবেন না।
দেশের ৩ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনে বড় জয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। খোদ প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, এই জয় ২৪’র জয়ের হ্যাট্রিকের ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছে। যদিও অঙ্কের হিসাব কিছু অন্য কথাই বলছে। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২টি আসন। এটাই ম্যাজিক ফিগার। যারা এই সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলবে তাঁরাই সরকার গড়বে কেন্দ্রে। দেশ শাসনও তাঁরাই করবে। কিন্তু মজার কথা, ৩ রাজ্যে জেতার পরেও সেই ম্যাজিগ ফিগার ছোঁয়া নিয়ে আশাবাদী নয় বিজেপির একটা বড় অংশের নেতারাই। শাহ নিজেও সেটা জানেন। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, অসম, উত্তরাখন্ড, ছত্তিশগড় – এই রাজ্যগুলিতে এখন বিজেপির নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম হয়ে আছে। সেই হিসাবে যদি ধরেও নেওয়া যায়, এই রাজ্যগুলির সব লোকসভা আসন বিজেপি জিতবে, তারপরেও কিন্তু ২৫০’র বেশি নিশ্চিত আসন বিজেপিকে কেউই দিতে পারছেন না। কেননা বিজেপির বড় জোটসঙ্গী এখন কেউ নেই। যারা আছে, তাঁদের নিজেদের কোনও ক্ষমতা নেই। বরঞ্চ তাঁরা বিজেপির কাঁধেই ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিজেপি ধাক্কা খেলে সেই নির্ভরশীলতা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।
অগ্যতা শাহি নজরে বড় শরিক দল যারা অতীতে বিজেপির জোটসঙ্গী ছিল। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। চট করে পুরাতন কোনও সঙ্গীই এখন বিজেপি বিরোধী মহাজোট INDIA ছেড়ে বার হবে না। তা সে তৃণমূল হোক কী অন্য কোনও দল। তাছাড়া উদ্বব ঠাকরে এবং নীতিশ কুমারের হাত থেকে যেভাবে বিজেপি তাঁদের দল কেড়ে নিয়েছে বা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে তা ব্যুমেরাং হতে বাধ্য। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির দাপাদাপি। বিরোধিতা করলেই গ্রেফতারি বা ঘরে এজেন্সির হামলাবাজি, বিজেপির ক্ষতিসাধনই করেছে। দেশের সব বিজেপি বিরোধী দল আজ তাই এককাট্টা। যেনতেন প্রকারণে হোক বিজেপিরাজের খতম চাইছেন তাঁরা। একইস অঙ্গে লক্ষ্যণীয়, ৩ রাজ্যে বিজেপির কাছে হারলেও কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে। এটা বিজেপির কাছেও খুব সুখের খবর নয়।