সাংসদ পদ ফোরানোর আগেই বিজেপি ছাড়লেন কুনার হেমব্রম
নিজস্ব প্রতিনিধি: জঙ্গলমহলের(Jungalamahal) বুকে আদিবাসী সমাজকে ভুল বুঝিয়ে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই নিজের ভোটের ঝুলি ভরতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবির। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে সেই সূত্রেই জঙ্গলমহলের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রই চলে যায় বিজেপির দখলে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম – এই ৫ আসনেই উনিশে ফুটেছিল পদ্ম। কিন্তু বিজেপি(BJP) যে আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়ে কার্যত নিজেদের ভোটের ঝুলি ভরছে সেটা বুঝতে পেরেই রুখে দাঁড়িয়েছেন আদিনাসীরা। আর তার জেরেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতেই ফুটেছিল ঘাসফুল(TMC)। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২টি আসন। সেই ১০টি আসনের মধ্যে ছিল ঝাড়গ্রাম জেলার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই। এবারে ২৪’র লোকসভা নির্বাচনে(General Election 2024) যে জঙ্গলমহলের বুকে বিজেপির বিরুদ্ধে গণরোষ আছড়ে পড়তে চলেছে সেটা আরও চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন বিজেপিরই সাংসদ কুনার হেমব্রম(Kunar Hembram)। সাংসদ হিসাবে তাঁর মেয়াদ শেষের আগেই তিনি বিজেপি ছেড়ে দিলেন। আর সেটাও এই লোকসভা নির্বাচনের মুখে।
ঝাড়গ্রাম জেলার ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, বিনপুর বিধানসভা কেন্দ্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বাঘমুণ্ডি, জয়পুর এবং বলরামপুর। বাঁকুড়ার তালডাংরা, রাইপুর, রানিবাঁধ। এই ১২টি আসন নিয়েই জঙ্গলমহল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঘমুণ্ডি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। বাকি সব ক’টি আসনেই ফুটছিল জোড়াফুল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভায় বদলে যায় চিত্র। শালবনি এবং বিনপুর বাদে বাকি আসনগুলিতে ভোটের হিসাবে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই ফলই জঙ্গলমহল নিয়ে বাড়িয়েছিল বিজেপির আশা। ভোটে এই ১২টি আসনের সবক’টিতেই জয় আসবে বলে ধরে নিয়েছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু জয় আসেনি। জঙ্গলমহলের এই আসনগুলিতে রয়েছে আদিবাসী ভোটের প্রাধান্য। সেই ভোটের বড় একটি অংশ উনিশের ভোটে গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। জঙ্গলমহলে তৃণমূলের সংগঠন গড়তে শুভেন্দু অধিকারীরও ভূমিকা ছিল। সেই শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর জঙ্গলমহল দখলে আত্মবিশ্বাস বেড়েছিল বিজেপি-র। কিন্তু হিসাব মেলেনি। আগামী দিনেও যে বিজেপির হিসাব মিলবে না, সেটা বুঝেই এখন সময় থাকতে থাকতেই বিজেপি ছেড়ে দিলেন কুনার।
পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কুনার হেমব্রম উনিশের ভোটে ১১ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের বীরবাহা সোরেন টুডুকে। কিন্তু একুশের ভোটে জঙ্গলমহলের বুকে বিজেপির খারাপ ফলের পরে পরেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে পদ্মশিবিরের। দলের কোনও সভা, র্যালিতে সেভাবে দেখাই মিলতো না কুনারের। এই অবস্থায় কার্যত সবাই ধরেই নিয়েছিল কুনার আর বিজেপির টিকিট পাবেন না ২৪’র ভোটে। ইতিমধ্যেই বিজেপি প্রথম দফার তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে যেমন ঝাড়গ্রাম নেই, তেমনি নাম নেই কুনারেরও। এরপরে পরেই জল্পনা আরও তীব্র হয় যে কুনার এবার আর টিকিট পাচ্ছেন না পদ্মের। এই অবস্থায় শুক্রবার বিজেপি ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন কুনার। দল ছাড়ার কারণ হিসাবে ব্যক্তিগত কারণকে তুলে ধরলেও আদতে তিনি বিজেপিতে তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছেন সেটা আর তাঁর অনুগামীরা লুকিয়ে রাখছেন না। যেভাবে ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা, মিড ডে মিলের টাকা, রাস্তার টাকা মোদি সরকার আটকে রেখেছে তা ভাল চোখে মোটেই দেখছে না জঙ্গলমহলের জনতা। তার বিস্ফোরণ ঘটতে চলেছে ২৪’র ভোটে। সেটা কুনার বুঝলেও বুঝতে চাইছেন না পদ্মের নেতারা। আগামী দিনে কুনারকে তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা যাবে কিনা সেটা সময়ই বলবে।