রেণুকাস্বামী হত্যাকাণ্ডে নিজেকে বাঁচাতে ভুয়ো অপরাধী সাজান দর্শন: পুলিশ
নিজস্ব প্রতিনিধি: গত কয়েকদিন ধরেই সংবাদের শিরোনামে রয়েছেন কন্নড় সুপারস্টার দর্শন থুগুদীপা। রেণুকাস্বামী- নামক এক যুবককে হত্যার দায়ের গ্রেফতার হয়েছেন দর্শন।পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছেন দর্শনের দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অভিনেত্রী পবিত্রা গৌড়াও। অভিযোগ, পবিত্রা গৌড়াকে অবমাননাকর ম্যাসেজ পাঠানোর জন্যেই কৌশলে রেণুকাস্বামীকে হত্যা করেছেন দর্শন। তাঁর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মোট ১১ জন। ইতিমধ্যে সবাইকেই গ্রেফতার করেছে কর্ণাটক পুলিশ। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে অভিনেত্রী পবিত্রা গৌড়াকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তে নেমে, ইতিমধ্যেই পুলিশ একাধিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। পুলিশের কথায়, রেণুকাস্বামীকে হত্যার জন্যে দর্শন ভুয়ো অপরাধী হিসেবে তিনজনকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। যাতে তাঁরা রেনুকাস্বামী হত্যা মামলায় দর্শনের নাম প্রকাশ্যে না আসে। মোট ১৫ লাখ টাকা তাঁদের দেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, চিত্রদুর্গা থেকে অভিনেতার ফ্যান অ্যাসোসিয়েশনে যুক্ত অভিনেতার একজন ডাই-হার্ট ফ্যানও অভিনেতার সাজানো ভুয়ো অপরাধীদের মধ্যে একজন। সুপারি দেওয়া চার ব্যক্তির দলকে পুলিশি তদন্তের সময় যাতে দর্শনের পরিচয প্রকাশ্যে না আসে, সেই কারণে ১৫ লাখ দেওয়া হয়েছিল। বাকি তাঁদের কারাদণ্ডের পর আরও ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। চার ব্যক্তির মধ্যে একজন, রাঘবেন্দ্র, যিনি চিত্রদুর্গে অভিনেতার অনুসরণকারীর একটি অংশ।
রেনুকাস্বামী হত্যা মামলা কি?
প্রায় ১০ বছর হয়ে গিয়েছে দর্শনের সঙ্গে পবিত্রা গৌড়ার সম্পর্ক। প্রায়শই তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায়। ৪৭ বছর বয়সী দর্শন রেনুকাস্বামীর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। যিনি অ্যাপোলো শাখায় ফার্মাসিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। কারণ ছিল, রেনুকাস্বামী সীমানা পেরিয়ে দর্শনের প্রিয় বন্ধু পবিত্রা গৌড়াকে ইনস্টাগ্রামে অবমাননাকর বার্তা এবং অশ্লীল ছবি পাঠিয়েছিলেন।তাই প্রেমিকাকে নিন্দার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি দর্শন। তাঁকেই খুন করার দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে দর্শনকে। ৮ জুন রেণুকাস্বামী কাজে গিয়েছিলেন। সেদিন বিকেলেই দর্শনের বন্ধু তথা সন্দেহ ভাজনদের মধ্যে একজন বিনয় একটি জমিতে রেণুকাস্বামীকে ধরে এনে আটকে রাখে। সেখানেই রেণুকাস্বামীকে নানাভাবে মারধর করা হয়। এরপর ৯ জুন সকাল ৮.৩০ টার দিকে তাঁকে পশ্চিম বেঙ্গালুরুর সুমনাহাল্লিতে একটি ঝড়ের ড্রেনের কাছে ফেলে দেওয়া হয়।রেণুকাস্বামীর মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় যখন বিপথগামী কুকুর তাকে খাওয়ার চেষ্টা করছিল। তার শরীরে মাথা, মুখ, কানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। এই ঘটনায় রাঘবেন্দ্র, কার্তিক বা 'কাপ্পে', নিখিল নায়েক এবং কেশবমূর্তি সহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় প্রথমে। তারা রেনুকাস্বামীর হত্যাকাণ্ডে তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। দর্শনের সহযোগী দীপক কুমার এম, তাদের অপরাধ স্বীকার নিশ্চিত করে চার জনকে প্রত্যেকের কাছে ৫ লাখ রুপি হস্তান্তর করেছেন। কর্ণাটক পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, রেণুকাস্বামীকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারজনের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। যাইহোক, এই ব্যক্তিরা আরআর নগরের একটি গুদামে অপরাধের আগেই চলে গিয়েছিল। ৯ জুন রেণুকাস্বামীকে কাঠের লাঠি ও দড়ি দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয়।
পুলিশ জড়িতদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে, দর্শন ও পবিত্র হত্যা মামলায় জড়িত ছিল তা স্পষ্ট হয়। ১০ জু্ন দর্শনকে মাইসুরুর একটি আভিজাত্য হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল যেখানে পবিত্রাকে বেঙ্গালুরুতে আটক করা হয়েছিল। বর্তমানে, অন্নপূর্ণেশ্বরীনগর থানার চারপাশে ২০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে 144 ধারা জারি করা হয়েছে। তদন্ত করতে হয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, দর্শনের দেওয়া নির্দেশের ভিত্তিতে রেণুকাস্বামীকে খুন করা হয়েছে। রাজরাজেশ্বরী নগরে দর্শনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিনয়ের গ্যারেজে অস্ত্রের আঘাতে রেণুকাকে দর্শনের সামনে হত্যা করা হয়েছে। এরপর তার লাশ একটি ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর দর্শনার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল এবং আরও অভিনেতা-সহ আরও ১১ জনকে এই অভিযোগ গ্রেফতার করা হয়েছে।