দিল্লিতে মমতার সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা কেজরি-অখিলেশের
কৌশিক দে সরকার: যে কথাটা তাঁর মুখ থেকে শোনার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন, সেই কথাটাই তিনি রাখঢাক না রেখে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গতকালই। জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এজেন্সির কাঁধে ভর দিয়ে চলা মোদি সরকারের পতন হবে আঞ্চলিক শক্তির হাতেই। বাংলাই পথ দেখাবে ভারতকে। বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে আমরাই দিল্লি দখল করব। আমরা জোট চেয়েছিলাম, কংগ্রেস করেনি। সিপিএম-কংগ্রেস জোট করে বিজেপির সুবিধা করছে। কিন্তু চিন্তা করবেন না। বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিকে একজোট করে দিল্লিতের সরকার গড়বো। বাংলা জিতে আমরা দিল্লি দখল করবই।’ কার্যত তাঁর এই বার্তাই বুঝিয়ে দিয়েছে, তিনিই এবার উদ্যোগী হচ্ছেন কেন্দ্রে আঞ্চলিক দলের জোট সরকার গঠনের জন্য। যদি সেটা বাস্তবে রূপ পায় ২৪’র ভোটের(General Election 2024) পরে তাহলে তা হবে দেশের প্রথম আঞ্চলিক দলের সরকার। আর তাই হাতগুটিয়ে বসে না থেকে আগামী মঙ্গলবারই দিল্লি(New Delhi) যাচ্ছেন তিনি মানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেখানেই তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল(Arvind Kejriwal) এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ প্রসাদ(Akhilesh Yadav) যাদব। সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে।
মমতা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২৪’র ভোটে বাংলায় একাই লড়বে তৃণমূল। কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলার মাটিতে কোনও জোট হচ্ছে না জোড়াফুলের। গতকালও মমতা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে চেয়েছিলাম। ওরা করেনি। আর সিপিএম-কংগ্রেসের জোট হয়েছে বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য। আমি সিপিএম করি না, বিজেপি করি না, আমি মা-মাটি-মানুষ করি। ভোটে জিততে সবাইকে জেলে ঢোকাচ্ছে। বিরোধীরা কেউ বাদ যাচ্ছে না। আমাকেও ছেড়ে কথা বলবে না। কিন্তু একটা কথা বলতে পারি, আমাকে জেলে পুরলেও জেল ফুটো করে বেরিয়ে আসব। আজ ক্ষমতায় আছে, তাই এজেন্সি সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে। কাল ক্ষমতায় থাকবে না, সব এজেন্সি উধাও হয়ে যাবে।’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা ২৪’র ভোটের আগে আর INDIA জোট নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতে চাইছেন না। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের ও বামেদের ভূমিকায় তিনি রীতিমত ক্ষিপ্ত। তাই বাংলা ও জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে তিনি আপাতত একলা চলো নীতি নিয়েছেন। নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি মনে করছেন, এটাই এই মহূর্তের সঠিক সিদ্ধান্ত। আর সেই সূত্রেই তাঁর জরুরি বৈঠক কেজরি ও অখিলেশের সঙ্গে।
কেন শুধু অখিলেশ ও কেজরির সঙ্গে বৈঠক? দেশে তৈরি হওয়া বিজেপি বিরোধী জোট INDIA-তে রয়েছে তৃণমূল, আম আদমি পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি। কিন্তু এই ৩ দলের সঙ্গেই আসন বন্টন নিয়ে বিবাদ বেঁধেছে কংগ্রেসের। এই ৩টি দল যে সংখ্যক আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে চাইছে তাতে সন্তুষ্ট নয় সোনিয়া গান্ধির দল। তাই বাংলায় যেমন তৃণমূল একক ভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেমনি অখিলেশও উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের জন্য ১১টি আসন ছেড়ে দিয়ে লড়াই করার তোড়জোড় শুরু করেছেন। আপের তরফেও পঞ্জাব ও দিল্লিতে একা লড়াই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাই প্রাথমিক ভাবে মমতাই এই দুই দলের দুল মাথার সঙ্গে বৈঠকে বসে ২৪’র পরবর্তী রোড ম্যাপ বানিয়ে রাখতে চাইছেন। সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে উদ্ধভ ঠাকরে, তেজস্বী যাদবকেও ডাকা হয়েছে। তবে তাঁরা আসবেন কিনা সেই নিশ্চয়তা মেলেনি। কেননা তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা নিয়ে এখনও বড় কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি।