আধার বাতিলদের নয়া কার্ড দেবে রাজ্য, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার অগ্নিকন্যার তোপের মুখে কেন্দ্রের সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) রোষানলে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। আর বাংলার মানুষ সেই মমতার কাছ থেকেই পাচ্ছে অভয়বার্তা। পাশে থাকার। বিপদের দিনে মায়ের মতো আগলে রাখার। বাংলার নিজের মেয়ের কাছেই আজ সুরক্ষিত বোধ করছেন বাংলার(Bengal) আমজনতা। আধার কার্ড নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য তথা তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্বের মধ্যেই সোম দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, ‘যাদের আধার বাতিল হয়েছে তাঁদের আলাদা কার্ড দেবে রাজ্য। ব্যাঙ্ক বা অন্য কাজে কারও সমস্যা হবে না। বিজেপি(BJP) পরিকল্পনা করেই আধার নিষ্ক্রিয় করেছে। গরিব মতুয়াদের(Matua) ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে। আসলে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের লক্ষ্যেই এ সব করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে কোনও ভাবেই তা হতে দেব না। রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে আধার কার্ড বাতিল করছে কেন্দ্র।’
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি ও কেন্দ্রকে নিশানা বানিয়ে বলেন, ‘আমি সত্যি দুঃখিত। ভোটের আগে এমন কী ঘটল যে ইচ্ছামতো কার্ড ডিঅ্যাক্টিভেট(Aadhar Card De- Activation) করে দিচ্ছে। পরিকল্পনা কী? ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা? আমার কাছে সবথেকে বেশি চিঠি তফসিলি ফেডারেশন দিয়েছে। রাজ্য সরকার, জেলা প্রশাসন কিছুই জানে না। জমিদারের মতো আচরণ করে এসব করছে। তাহলে কার্ড করার দরকার কী ছিল? সব তথ্য তো নিয়েছিলেন। বডি স্ক্যানও তো করেছিলেন। কার দেহে কী অসুখ জেনেও তো করেছিলেন। আধারকে ব্যাঙ্কে লিঙ্ক করেছিলেন। আধার কার্ডের নামে অত্যাচার হয়েছে। ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আধার কার্ড ছাড়া কোনও সুবিধা পাবে না। গরিব মানুষরা পাবেন না? ভোটের আগে এনআরসি করা নিশ্চয়ই বিজেপির পরিকল্পনা নয়? আগে মানুষের আধার কার্ড কেড়ে নিলাম, তারপর ক্যা দেব। টাকা দিয়ে তো আধার কার্ডটা করেছেন। মানুষকে বঞ্চিত হতে দেব না, যা করার করব।’
এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী গতকালের ঘোষণা মাফিক জানিয়ে দেন, ‘যাদের নাম কাটা গিয়েছে, তাঁদের আলাদা কার্ড দেবে রাজ্য। আমরা একটা পোর্টাল আনছি। সেখানে যাদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে তাঁরা নিজেদের নাম ঠিকানা নথিভুক্ত করবেন। আমি মুখ্যসচিবকে বলে দিয়েছি। আগামী কাল থেকেই কাজ শুরু করবে ওয়েব পোর্টালটি। রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে আধার কার্ড বাতিল করছে কেন্দ্র। কেন এত আধার কার্য বাতিল করা হচ্ছে? জবাব দিক কেন্দ্র। যাদের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হয়েছে তাদের রাজ্য বিকল্প কার্ড দেবে। এই কার্ড দিয়েই সবরকম সুযোগ সুবিধা পাবেন। কেন্দ্রীয় সরকার গায়ের জোরে সব কাজ করছে।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই সাংবাদিক বৈঠকের আগেই অবশ্য বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, ‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। বৈঠকে শাহ আমাকে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। সব সমস্যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিটে যাবে। যাদের এমন সমস্যা হয়েছে, তাঁদের একটি ফর্ম পূরণ করে নতুন করে আধার সক্রিয় করার আবেদন করতে হবে। আমায় ফোনে বা ইমেল করে ফর্ম পাঠাতে হবে। এর পরে আমিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব আধার সক্রিয় করে দেব। গ্রাহকদের কাছে এই সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাবতীয় সঙ্কট কাটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেব আমি। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের যে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে এবং ফর্ম পূরণ করে পাঠালে আমি দায়িত্ব নিয়ে আধার সক্রিয় করে দেব।’