‘আর সাত-আট দিন প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন, তার পর আর থাকবেন না’, মোদিকে কটাক্ষ মমতার
নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতার(Kolkata) বেহালায়(Behala) দলের নির্বাচনী জনসভা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী(Prime Minister of India) নরেন্দ্র মোদিকে(Narendra Modi) তীব্র কটাক্ষ হানলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী(Chief Minister of West Bengal) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, ‘বাংলার উন্নয়ন ওরা চোখে দেখে না। হিংসুটেরা কুৎসা করে। আজও বলেছে। এমন কথা বলব না, যে করিনি বা করতে পারব না। এমন কথা বলব না, যা শোভা পায় না। কথা বলার সৌজন্য বোধ থাকে। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীজি, আর সাত-আট দিন প্রধানমন্ত্রী বলতে পারবেন। তার পর আর থাকবেন না। তিনি কাকদ্বীপে দাঁড়িয়ে বলছেন, সাইক্লোন দিল্লি থেকে বসে পর্যবেক্ষণ করেছে। এত মিথ্যা বলা শোভা পায়? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে। ওরা কাজ করলে টাকা দিতে হয়। আমি রেলমন্ত্রী থাকার সময় রাজ্যগুলির সঙ্গে চুক্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। গুজরাতের যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, দাঙ্গা করেছেন। তখন সারা দেশের খবর রাখতেন না। আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রেলমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী, কয়লামন্ত্রী ছিলাম। সুব্রত ভট্টাচার্য আমার হাত দিয়ে পুরস্কার নিয়েছিলেন। বুলা চৌধুরী এখন অন্য দল করতেই পারে। আমাকে বলেছিল অর্জুন পুরস্কার চাই। বললাম আটটার মধ্যে ৬টায় সোনা পেতে হবে, এশিয়াডে। ও পেয়েছিল, আমি দিয়েছিলাম। শচীনের কোচ আচরেকরকে দ্রোণাচার্য দেওয়া হয়নি। আমি দিলাম। আমার সময়ে জাতীয় মহিলা কমিশন তৈরি হয়। মানবাধিকার কমিশনের জন্য ২১ দিন ধর্না দিয়েছিলাম।’
এর পাশাপাশি মমতা বলেন, ‘যিনি বলেন, দিল্লি থেকে বসে সাইক্লোন সামলেছেন, তাঁকে বলব প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা বলা সাংবিধানিক অধিকার নয়। কাজও নয়। কাকে নিয়ে করিয়েছিলেন? এনডিআরএফ দেখাচ্ছে? টাকাও দেব, আবার বড় কথা বলবেন! উনি নাকি মা কালীকে ডেকে সাইক্লোন আটকেছে। নড্ডা বলেছেন, উনি সব দেবতার রাজা। আমি বলি, হতেই পারে। কেউ বলেন, জগন্নাথ দেবও ওঁর ভক্ত। সকলে ওঁর ভক্ত হলে, যে দেবতা হয়, তাঁর রাজনীতি, দাঙ্গা করা শোভা পায় না। মন্দির করছি, বসুন, নকুলদানা, ফুল, বেলপাতা দেব। চাইলে ধোকলাও দেব। ভোট ছাড়া তো আসেন না। বিপদে আসেন না। বাংলাকে লাঞ্জনা করাই ওঁর কাজ। আগে বলত, মমতাজি বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেন না। সরস্বতী পুজো করতে দেন না। সেই বাংলা ইউনেস্কোর তকমা পেয়েছে। দেখ কেমন লাগে! বাংলা কাজ করেন না। সব তিনি করেন। কোনও কালোধন এনেছেন? ওয়াশিং মেশিনে মাফিয়াদের ঢুকে কালোদের সাদা করেছেন। সাধু আপনি! কত রকম কালী হয়, তিনি কী জানেন? আপনি কী করে সাক্ষাৎকার দেন? গত ১০ বছরে কাউকে দেননি। নিজে প্রশ্ন লিখে নিজে উত্তর দেন। জনসমক্ষে হোক। গুজরাতে হবে? আপনি চাইলে আমি যাচ্ছি। দেখব, জ্ঞান ভান্ডার কত, কত দেশকে ভালবাসেন! সব বেচে দিল। রেল, সেল, গেল, সব বেচেছে। মোদিবাবুর কল হল খুড়োর কল। আজ থেকে পাকিস্তান বলতে শুরু করেছেন। আবার পুলওয়ামা হবে বোধ হয়।’
মোদিকে নিশানা বানিয়ে মমতা বলেন, ‘উনি যত বার বাংলায় আসেন, এক জন করে আইএএসকে সরিয়ে দেন। ক্ষমতা যে দিন মানুষ কেড়ে নেব, জবাব দেবে ব্যালটে। চেয়ারে না থাকলে কেউ দেখবে না। কালো ধন করছেন, পিএম কেয়ারের টাকা কই? রেলের কর্মীদের আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে। তিনি একটা ব্যাঙের ছাতা খান, চার লক্ষ টাকা দাম। তাইওয়ানের ব্যাঙের ছাতা। আমি এ সবে যেতাম না, যদি না এ সব বলে বাংলার মানুষকে অপদাস্ত করতেন। সমাজমাধ্যমে দেখেছি একটা ছাতার দাম ৮০ হাজার। লাঞ্চে খরচ চার লক্ষ টাকা। এটা খাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু যখন বলেন, মাছ খাবে না। তা হলে কি বার্লি খাব? আমি দেখতে পেয়েছিলাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। টেলিপ্রম্পটার লাগানো, সেখান থেকে পড়ছেন। নিজে দেখেছি। আপনারা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। যা যা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার সবই করেছি। বিনামূল্যে রেশন থেকে স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, সবই হয়েছে। আমার এখন একটাই কাজ বাকি, বিজেপিকে হঠানো। বাংলার ভাল না করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা হচ্ছে। বিদ্যাসাগেরর মূর্তি ভেঙে দাও। রবীন্দ্রনাথের উল্টো ছবি দাও। নেতাজির যোজনা কমিশন তুলে দাও। বাংলা কী করেনি? কবিগুরু বেঁচে থাকলে মোদির আস্ফালন দেখে বলতেন, বাঁধ ভেঙে দাও!’