‘অর্জুন এখনও বিজেপির সাংসদ, পার্থ আমাদের প্রার্থী’, দূরত্ব বুঝিয়ে দিলেন মমতা
নিজস্ব প্রতিনিধি: দূরত্ব বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। দূরত্ব তৃণমূলের(TMC) সঙ্গে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের(Arjun Singh)। সেই দূরত্বের নেপথ্যে ২৪’র ভোটে(General Election 2024) ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের হয়ে অর্জুনের টিকিট না পাওয়ার ঘটনা। উনিশের ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে পা রেখেছিলেন অর্জুন। সেই নির্বাচনে তিনি ব্যারাকপুর থেকে বিজেপির টিকিটও পেয়ে যান। জিতেও যান। কিন্তু একুশের ভোটের ১ বছরের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন তৃণমূলে। আশা ছিল ২৪’র ভোটে তিনি ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করার টিকিট পাবেন। সেই হিসাব কিন্তু মেলেনি। ব্যারাকপুরে অর্জুনের বদলে তৃণমূল প্রার্থী করেছে রাজ্যের সেচমন্ত্রী তথা নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিককে। আর তার জেরেই অর্জুন ফের পদ্মমুখী। কিন্তু পদ্মের একাংশ ফের তাঁকে ফেরানোর এবং দলের হয়ে ভোটে লড়াই করার জন্য টিকিট দেওয়ার তীব্র বিপক্ষে। দলের নীচুতলার কর্মীরাও অর্জুনের প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। এই অবস্থায় অর্জুনের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব গড়ে দিলেন মমতা নিজেই। বুঝিয়ে দিলেন সত্যিই তৃণমূলে এখন Unwanted অর্জুন।
এদিন অর্থাৎ ১৩ মার্চ উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা অর্জুন সম্পর্কে মুখ খোলেন। জানান, ‘অর্জুন এখনও বিজেপির সাংসদ। ও কোথায় দাঁড়াবে ওর ব্যাপার। পার্থ ভৌমিক আমাদের প্রার্থী। ও এখনও বিজেপির সাংসদ, ও বিজেপির সাংসদ পদ ছাড়েনি। বিজেপির টিকিটেই নির্বাচিত আছে। সুতরাং এটা ওর স্বাধীনতা, ও কোন দলে দাঁড়াবে না দাঁড়াবে। আমরা রাজনতিক লড়াই করব। আমাদের প্রার্থী ব্যারাকপুরে পার্থ ভৌমিক। ভালো ছেলে, আমি আশা করি পার্থ ভৌমিক মানুষের পুরো সমর্থন পাবে।’ অর্থাৎ অর্জুনে আর আস্থা নেই খোদ মমতারও। এতদিন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল তথা এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা দুই তৃণমূল বিধায়ক, বীজপুরের সুবোধ অধিকারী এবং জগদ্দলের সোমনাথ শ্যাম প্রকাশ্যেই অর্জুনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। এবার দেখা গেল মমতাও অর্জুনকে নিয়ে ক্ষুব্ধ। কেননা বাবুল সুপ্রিয়োর মতো অর্জুন সাংসদ পদ ত্যাগ করেননি। বাবুল বিজেপি(BJP) ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাংসদ পদও ছেড়েছিলেন। সেই কারণে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনও হয়েছিল। তাতে জিতেছিল তৃণমূল। সাংসদ হয়েছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। পরে বাবুলও উপনির্বাচনে জিতে কলকাতার বালিগঞ্জ থেকে তৃণমূলের বিধায়কও হন, রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছেন। অর্জুন কিন্তু সেই পথে হাঁটা দেননি।
তবে অর্জুনের ফুলবদলের প্লট তৈরি থাকলেও নিজের খাস তালুকেই এবার গেরুয়া শিবিরের মধ্যেই চাপের মুখে পড়তে পারেন অর্জুন। তাঁকে দলে ফেরানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না স্থানীয় স্তরের বিজেপি নেতারা। অর্জুনকে বিজেপিতে নেওয়া হলে তাঁর পাশাপাশি দলের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কমবে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বিজেপি নেতাদের। অর্জুন যতই বলুন না কেন, ‘বিজেপিতে আমার সবাই বন্ধুবান্ধব’, বাস্তব কিন্তু সেই ছবি তুলে ধরছে না। দলের নীচুতলার কর্মীদের বক্তব্য, যারা নিজের সুবিধার জন্য একদল থেকে আর এক দলে যাওয়া আসার রাজনীতি করেন তাদের ফেরালে নিচুতলার কর্মীদের মনে আঘাত লাগে এবং সেটা যদি প্রকাশ্যে চলে আসে তাহলে মানুষও সেটা ভালোভাবে নেন না। তাই অর্জুনকে নিয়ে আপাতত ধীর পদক্ষেপই করছে পদ্মশিবির। অর্জুন প্রকাশ্যে যতই মোদির গুণগান গান না কেন, যতই বিজেপির প্রশংসা করুন না কেন, বিজেপির কেউ কিন্তু অর্জুনকে নিয়ে কোনও মন্তব্যই করছেন না। সবার মুখে কার্যত কুলুপ।