প্রসূণেই আস্থা মমতার, ব্রাত্য বাবুন, বিচ্ছেদ সম্পর্কেও
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি বাংলার অগ্নিকন্যা। বাংলার জন্য নিজের জীবন দিতেও পিছুপা হন না। বাংলার জন্য জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি লড়াই চালিয়ে যান। আর বাংলাও তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাইরে কিছু চেনে। সাময়িক ভাবে কেউ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের ভোট আদায় করতে পারে, কিছু আসন জিততে পারে, কিন্তু দিনের শেষে সেই হাতের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) আর তৃণমূল কংগ্রেসই(TMC) থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর পরিবার বাংলার জনতা, তাঁর পরিবার ঘাসফুলের কর্মীরা। আর তাই সেখানে লোভের কোনও ঠাঁই নাই। ঠাঁই নাই কোনও পরিবারতন্ত্রেরও। তাই লোভে পাপ, আর পাপে পতনের পথে ধেয়ে যাওয়া নিজের ভাইকেও রেয়াত করেন না তিনি। সেই ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলা। সাক্ষী থাকল ভারতবর্ষ। বুধবার শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে সাংবাদিকদের সামনেই মমতা সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘আমি যে দিন থেকে দল করি, কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই। মা মাটি মানুষই আমার পরিবার। আমাদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কে ৩২ জন সদস্য। কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ। আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।’
২৪’র ভোটে(General Election 2024) তৃণমূলের তরফে এবারেও প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই(Prasun Banerjee) হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র(Howrah Constituency) থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রসূণ ২০১৪ সাল থেকে সেখানকার তৃণমূল সাংসদ। এই নিয়ে তিনি ৩ বার লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন। সেই প্রসূণের বিরুদ্ধেই মমতার ছোট ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাবুন নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করার কথা জানিয়েছিলেন এদিন সকালেই। তার আগে তিনি দিল্লিতে গিয়ে এক বিজেপি বন্ধবের সঙ্গে বৈঠকও করে আসেন। যদিও এদিন বাবুন(Babun Banerjee) সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘যত দিন দিদি আছে দল ছেড়ে কোথাও যাব না। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষটার প্রতি আমার অ্যালার্জি রয়েছে। ওর যোগ্যতা নিয়েও আমার সংশয় রয়েছে। প্রসূনকে প্রার্থী করায় আমার মনে হচ্ছে, যে ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পারে না, তাকে দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করানো হচ্ছে। প্রসূনের থেকে অনেক ভাল ভাল প্রার্থী ছিল। কিন্তু তাদের প্রার্থী না করে ওকে প্রার্থী করা হল। আমার মতে, ওর মতো বাজে লোককে না দেওয়াই উচিত ছিল। দিদি যত দিন বেঁচে আছে বিজেপিতে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। দিদি যত দিন আছে আমি কোথাও যাব না। তবে আমি হাওড়ার ভোটার হয়েছি। নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াব। দিদি আমার কাছে ভগবান। দিদির কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। দিদির কাছে আশীর্বাদ চাইব। দিদি হয়তো আমাকে না করবে। কিন্তু আমি দিদিকে বোঝানোর চেষ্টা করব কেন দাঁড়াচ্ছি।’
মমতা কিন্তু বাবুনের এই অবস্থান মেনে নেননি। এদিন কলকাতায় ফেরার আগে তিনি শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়ে দেন, বাবুনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার কথা। বলে দেন, বাবুনের সঙ্গে আর তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনও সম্পর্ক নেই। হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হতে না পেরে বাবুন যা করছেন বা বলছেন, তাতে গোটা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ক্ষুব্ধ। এদিন তিনি জানিয়েছেন, ‘ওর অনেক কাজই আমি অনেক দিন ধরে পছন্দ করি না। কিন্তু সব কথা তো বাইরে বলা যায় না। আজ বলছি। যে যেখানে খুশি যেতে পারে। স্বাধীন ভাবে ভোটে দাঁড়াতে পারে। তবে হাওড়া সদরে তৃণমূলের প্রার্থী, জোড়াফুলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্য কেউ নয়। ও ছোটবেলার কথা ভুলে গিয়েছে। বাবা যখন মারা গেল, ওর তখন আড়াই বছর বয়স। আমি আমার পরিবারের সবাইকে মানুষ করেছি। স্কুলে পড়িয়ে ৪৫ টাকা পেতাম। তার পর আমি রাজনীতি করতে শুরু করি। কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের সব ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা হয়। কাউন্সিলর, এমএলএ, এমপি সব ভোটে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু আমি পরিবারতন্ত্র করি না। মানুষতন্ত্র করি। লোভীদের আমি পছন্দ করি না।’