পথ দেখিয়েছেন মমতা, Telemedicine-এ জীবন বেঁচেছে হাজারজনের
নিজস্ব প্রতিনিধি: নিত্যদিন গ্রামের ভিড়, শহরের ভিড়, জেলার ভিড়, মফস্বলের ভিড় আছড়ে পড়ত কলকাতার একের পর এক সরকারি হাসপাতালে। নিত্যদিন লেগেই থাকতো রেফার রোগ। সেই ছবি বদলাতেই উদ্যোগী হন বাংলার(Bengal) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। রেফার রোগ বন্ধ করার পাশাপাশি রাজ্যে গড়ে তোলেন একের পর এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। তাতেও ভিড় ঠেকানো যাচ্ছিল না। আবার এটাও দেখা যাচ্ছিল, দূর দূরান্ত থেকে অসুস্থ রোগীকে কলকাতায় এনে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকটাই মূল্যবাণ সময় বেড়িয়ে যাচ্ছে হাত থেকে। সেই সব সমস্যার সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীই পথ দেখিয়েছিলেন। সেই পথের নাম Telemedicine। এখন সরকারি তথ্য বলছে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে রাজ্যে চালু হওয়া এই Telemedicine চলতি সপ্তাহের সোমবার পর্যন্ত ১ হাজারজন রোগীর জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে। কেননা সেদিনই Telemedicine’র মাধ্যমেই হাজারতম রোগীকে মৃত্যুমুখ থেকে জীবনের পথে ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকেরা।
২০২২ সালে এপ্রিলে রাজ্য ‘স্বাস্থ্যইঙ্গিত’(Sastha Ingit) কর্মসূচির আওতায় Telemedicine’র মাধ্যমে স্ট্রোকের চিকিৎসা বা টেলিস্ট্রোক চালু করে। সেই সময় দেশের মধ্যে কেবলমাত্র হিমাচল প্রদেশে এই পরিষেবা মিলতো। বাংলাতেও সেই পরিষেবা চালু হতে দেখে দেশের একের পর এক রাজ্যে এই পরিষেবা চালু হয়। বাংলার বুকে টেলিস্ট্রোক পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে বেস ক্যাম্প হয়ে উঠেছে কলকাতার Bangur Institute of Neurosciences। এখান থেকেই রাজ্যের ছোট, বড়, মাঝারি, সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালে টেলিস্ট্রোক পরিষেবা প্রদান করা হয়। রাজ্যের মোট ৩৮টি সরকারি হাসপাতাল এই পরিষেবা পায়। এই সব হাসপাতালের অধিকাংশই জেলা এবং মহকুমা হাসপাতাল। এই পরিষেবা সেখানে চালুর প্রধান শর্তই ছিল ২৪ ঘণ্টার CT Scan পরিষেবা চালু রাখা। কেননা স্ট্রোকের ৪ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোকের চিকিৎসা করা সম্ভব হলে টেলিস্ট্রোকে সাফল্যের হার প্রায় ৬০ শতাংশ। তাই চাই ২৪ ঘণ্টার CT Scan পরিষেবা। আর তাতে দেখাও যাচ্ছে যে, স্ট্রোক কাটিয়ে ৬০ শতাংশই মানুষ নবজীবন লাভ করেছেন Telemedicine’র মাধ্যমে চিকিৎসা হওয়ায়।
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলায় টেলিস্ট্রোক পরিষেবা সাফল্যের মুখ দেখার পর এবার রাজ্যের আরও কিছু জেলা, মহকুমা এবং সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার CT Scan পরিষেবা চালু করা হবে যাতে সেখানেও Telemedicine’র মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা যায়। এখন যে ৩৮টি হাসপাতালে এই পরিষেবা মিলছে সেখানে স্ট্রোকের কোনও রোগী এলেই চিকিৎসকরা তাঁর CT Scan করিয়ে দ্রুত তার রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন বাঙ্গুরে। সেখানে চিকিৎসকরা যদি দেখেন যে রোগীর স্ট্রোকের জন্য মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে তাহলে তাঁরা বিশেষ ধরনের চিকিৎসা প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেন। হার্ট অ্যাটাকে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশির ক্ষতি কমাতে বিশেষ ধরনের ইঞ্জেকশানও দিতে বলেন। এই ধরনের ২টি ইঞ্জেকশান রয়েছ যার বাজার দর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কল্যাণে বাংলার মানুষ সেটাও বিনামূল্যে পান। এভাবেই দেখা যাচ্ছে প্রায় ৬০ শতাংশ স্ট্রোকের রোগী Telemedicine’র মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন।