অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাও সমান অংশীদার
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিয়ের পর মেয়েরা বাবার সম্পত্তির(Fathers Property) অংশীদার হলেও তিনি কেন অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণের(Compensation for Acquired Land) ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন না, এই প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। রাজ্যের আপত্তি খারিজ করে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাও(Married Woman) সমান অংশীদার বলে বিবেচিত হবে। বীরভূমের বাসিন্দা রেখা পালের বাবার সম্পত্তি বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার। অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কারা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে ২০১২ সালের ১২ অক্টোবর রাজ্য সরকার একটি নির্দেশিকা জারি করে। সেই নির্দেশিকা অনুসারে সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরির আবেদন জানান রেখাদেবী। কিন্তু Director of Employment সাফ জানিয়ে দেয়, যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেটির প্রকৃত মালিক রেখাদেবীর বাবা। এবং যেহেতু তিনি বিবাহিতা, তাই তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন না।
২০১৩ সালে Director of Employment’র এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রেখাদেবী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তৎকালীন বিচারপতি অশোক দাস অধিকারীর এজলাসে মামলাটির শুনানি হয়। এরপর বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী রাজ্যের জারি করা নির্দেশিকাটি খারিজ করে দেন। নির্দেশে বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী জানিয়ে বলেন, মেয়ে বিবাহিতা হলেও ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে এভাবে লিঙ্গের ভিত্তিতে বিভাজন করা যায় না। এক্ষেত্রে বিবাহিত ছেলে ও মেয়েকে একই সারিতে গণ্য করতে হবে। এরপরই রাজ্যের জারি করা ওই নির্দেশিকাকে অসাংবিধানিক ব্যাখ্যা দিয়ে তা খারিজ করে দেয় বিচারপতি অশোক দাস অধিকারীর সিঙ্গল বেঞ্চ। কিন্তু সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। দীর্ঘ ১০ বছর হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাস ঘুরে অবশেষে মামলাটি ওঠে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সাব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু এতদিন কেটে গেলেও রাজ্যের তরফে কোনও সদুত্তর না মেলায় অবশেষে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলাকারী রেখা পালের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে যদি বিবাহিত পুত্র, বিধবা স্ত্রী বা অবিবাহিত মেয়ে পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়, সেক্ষেত্রে বিবাহিতা মেয়েরাও পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সহ দেশের একাধিক রাজ্যের হাইকোর্টের একাধিক রায় রয়েছে। স্রেফ লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে বিবাহিতা মেয়েকে বঞ্চিত করা যায় না। তাই রাজ্য সরকারের ওই নির্দেশিকা অসাংবিধানিক। অর্থাৎ এবার থেকে বাংলার বুকে কোথাও জমি অধিগৃহীত হলে সেই জমির জন্য যে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে সেখানে জমির মালিকের ছেলে ও মেয়ে প্রত্যকেই সমান অধিকারী হিসাবে চিহ্নিত হবেন। মেয়ে বিবাহিত, না অবিবাহিত, নাকি বিধবা এইসব প্রশ্নও এবার থেকে আর সামনে আনা যাবে না।