CAA নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মতুয়া সমাজ, চিন্তায় রেখেছে নথি
নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশজুড়ে ১১ মার্চ থেকে লাগু হয়ে গিয়েছে CAA বা Citizenship Amendment Act যা ২০১৯ সালে তৈরি করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তা আচমকাই দেশজুড়ে লাগুর কথা জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তারপর থেকেই বাংলার মতুয়া সমাজ(Matua Society) কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। একদল এই আইন লাগুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মোদি বন্দনায় মেতে উঠে উৎসব পালন করছেন, অপরদল কার্যত চিন্তায় পড়েছেন প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করে তাঁরা নাগরিকত্ব আদায় করতে পারবেন কী পারবেন না, তা নিয়ে। যারা নথি জোগাড় করা নিয়ে চিন্তিত তাঁদের সাফ জবাব, ‘আমরা বরাবরই নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দাবি করে এসেছি। আমরা কোনও শর্ত চাই না। আমরা কোনও কাগজ দেখাব না। আমরা নিঃশর্ত নাগরিকত্ব চাই। এই CAA নিয়ে আমরা ধোঁয়াশায়।’ বনগাঁ থেকে রানাঘাট, কোচবিহার থেকে মালদা, নবদ্বীপ থেকে আসানসোল, সর্বত্রই উদ্বেগ বাড়ছে নথি জোগাড় করা নিয়ে।
গতকাল সন্ধ্যায় CAA লাগু হওয়ার ঘোষণা সামনে আসতেই মতুয়া ধর্মসমাজের প্রাণকেন্দ্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার গাইঘাটা ব্লকের ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে ভিড় জমান মতুয়া ভক্তরা। ডঙ্কা, কাঁসর নিয়ে আনন্দে মাতেন তাঁরা। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ‘আমরা স্বাধীনতা পেলাম।’ বিভিন্ন জায়গায় আনন্দে মেতে ওঠেন বহু মতুয়া। কিন্তু পাশাপাশি অনেকের মনে নানা প্রশ্নও দেখা দিতে শুরু করে। এরপরে সময় যতই গড়িয়েছে বা গড়াচ্ছে, সেই উদ্বেগ আর প্রশ্ন যেন বেড়েই চলেছে। All India Matua Mahasangh’র সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘CAA চালু হওয়ায় আমরা খুশি। তবে কেন্দ্র ঘোষণা করুক এর শর্ত কী! আমরা কোনও শর্ত চাই না।’ আবার West Bengal Matua Welfare Committee'র দাবি, ‘নাগরিকত্ব আইন চালু হয়েছে, খুব ভালো। কেন্দ্র সরকার পরিষ্কার করুক কী শর্ত, তারা আরোপ করেছে। আমরা কোনও শর্ত মানতে চাই না।’
কার্যত তৃণমূল প্রভাবিত মতুয়াদের দাবি, ‘আমরা এ দেশের নাগরিক। তাহলে নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রয়োজন কী?’ কেন্দ্রে কংগ্রেসের সময়ে ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়েছিল। তাতে বলা হয়, ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর যারা এদেশে এসেছেন, তারা সকলেই অনুপ্রবেশকারী। এই আইনকে কালা কানুন বলে বিরোধিতা শুরু করেন মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির বড়মা বীণাপাণি ঠাকুর। ঠাকুরবাড়িতেই বড়মার নেতৃত্বে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন মতুয়ারা। এর পর ইছামতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। তৃণমূলের মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসাতে উদ্যোগী হয় গেরুয়া শিবির। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের তাস খেলে বনগাঁয় বাজিমাত করে বিজেপি। সাংসদ হন বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুর। এর পরেই মতুয়া সম্প্রদায়-সহ ঠাকুরবাড়িও আড়াআড়ি দুটো ভাগ হয়ে যায়। একদিকে তৃণমূল(TMC) প্রভাবিত মতুয়ারা, অন্যদিকে বিজেপির(BJP)। দুই দলের মাঝে পড়ে অনেক সাধারণ মতুয়ার এখন বিভ্রান্ত। এদের বক্তব্য, ‘আমরা এ দেশে ভোট দিই। আমাদের ভোটে সরকার তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে নাগরিকত্ব নেওয়ার কী প্রয়োজন? আমাদের ভোটার, আধার কার্ড রয়েছে। এ দেশে জমির মালিকানা রয়েছে। আবার কেন নতুন করে নাগরিক হতে হবে?’