বিগত ১০ বছরে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে ধস, ঋণ নেওয়ার চাহিদাও সর্বকালীন উচ্চতায়
নিজস্ব প্রতিনিধি: রেকর্ড পতন ঘটেছে দেশের পারিবারিক বা গৃহস্থের আর্থিক সঞ্চয়ের(Family Savings) শতকরা হারে। ফলে সংসার চালাতে মধ্যবিত্তের(Middle Class People) ঋণ নেওয়ার চাহিদাও সর্বকালীন উচ্চতা ছুঁয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সঞ্চয় ও খরচের ফারাকও। Reserve Bank of India বা RBI’র ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বার্ষিক রিপোটে(Yearly Report) উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে Gross National Disposable Income বা GNDI’র ৫.২ শতাংশে নেমে গিয়েছে গৃহস্থ সঞ্চয়ের হার। অন্যদিকে, ঋণের(Loan) বোঝা সবর্কালীন বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে গিয়েছে ৫.৭ শতাংশে। রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, গত এক দশকে মোট গৃহস্থ সঞ্চয়ের পরিমাণ ৭.৫ শতাংশের আশপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। একমাত্র বিশ্বব্যাপী কোভিডের মহামারীর সময়ে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সর্বোচ্চ ১১.৬ শতাংশের পৌঁছেছিল এই হার। কিন্তু, তারপর থেকে দু’টি ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যান নিম্নমুখী হয়েছে।
একইভাবে দেশের গড় আর্থিক সঞ্চয়ের হারও গত এক দশকে ১০-১১ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। শুধু কোভিডকালে তা বেড়ে ১৫.৬ শতাংশে পৌঁছেছিল। তারপর আবার যেই কে সেই অবস্থা। অন্যদিকে, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে যেখানে গৃহস্থ ঋণের হার ৩ শতাংশ ছিল, সেটাই ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রেকর্ড বেড়ে ৫.৭ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, একদিকে যখন সঞ্চয়ে পতন ও ঋণের বোঝা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, ঠিক তখনই দেশের বেকারত্ব ও মজুরির বেহাল দশা নিয়েও অশনি সঙ্কেত দিয়েছে RBI। তাঁদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত এক দশকে সর্বভারতীয় স্তরে কর্মচারীদের মজুরিতে বিশেষ একটা হেরফের হয়নি। ২০০০ সালে দেশের শিক্ষিত বেকারের হার যেখানে ৫৪.২ শতাংশ ছিল, সেটাই ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৭ শতাংশে। আধা গ্রামীণ এবং শহুরে যুব সমাজের মধ্যে কর্মহীনতা চরম ক্ষোভও তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে ভাল নেই আমার আপনার দেশ।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে দেশে পারিবারিক সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালে সেটাই কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাত্ ৩ বছরে ভারতবাসীর মোট সঞ্চয় কমেছে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা। লক্ষ্যণীয় বিষয়,৩ বছরে যে পরিমাণ সঞ্চয় কমেছে,সেটা দেশের মোট সঞ্চয়ের সমান। অন্যভাবে বলতে গেলে ভারতে পরিবারপিছু অর্ধেকের বেশি সঞ্চয় কমেছে। তাও মাত্র ৩ বছরে। অন্যদিকে গরিব মানুষ ও মধ্যবিত্তদের উপর ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। ২০১৮-১৯ সালে ভারতে পরিবারগুলির উপর ৭ লক্ষ ৭০ হাজার কোটির ঋণ ছিল। ২০২৩-২৪ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমবেশি ১৬ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাত্ একদিকে যেমন সঞ্চয় তলানিতে ঠেকছে, তেমনই পরিবারপিছু ঋণের বোঝা দ্বিগুণ হয়েছে।
মধ্যবিত্ত বলতে বোঝানো হয়েছে যাদের আয় বছরে ৬ লক্ষ টাকা বা তার নীচে। আর তারাই জেনে বা না জেনে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। টিভি,ফ্রিজ থেকে গাড়ি,বাড়ি এমনকি মোবাইলেও EMI। আর এই EMI দিতে দিতেই রোজগারের বেশিরভাগটা খরচ হয়ে যাচ্ছে। কত খরচ? হিসাব করতে বসলে দেখব,গড়ে বেতনের ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ টাকা EMI দিতেই বেরিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত ফ্ল্যাটের EMI। সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড, Personal Loan ও আরও অনেক কিছু। ভারতের মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ কীভাবে ঋণের ফাঁদে আটকে পড়ছে,RBI'র বার্ষিক রিপোর্টে তার একটা ছবি উঠে এল। আর সেই ছবিটা যথেষ্টই আশঙ্কার।