শুধু নয় তিস্তা, শুকিয়ে যাচ্ছে ডুয়ার্সের একের পর এক নদী
নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জীবনরেখা তিস্তা(Teesta) যে ক্রমশ শুকিয়ে আসছে সেটা বার বার গত কয়েক বছর ধরে বলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। আর তিস্তার সেই শুকিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে সিকিমে তিস্তার বুকে গড়ে তোলা একের পর এক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তবে শুধু তিস্তা নয়, দেখা যাচ্ছে ডুয়ার্সের(Dooars) ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অনেক নদীই(Rivers) এখন ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে বা বর্ষাকাল ভিন্ন সেই সব নদীতে জলের একটা কণাও থাকছে না। নদীপৃষ্ট বা Riverbed শুকিয়ে কাঠফাটা হয়ে যাচ্ছে। আর এই ঘটনা দেখে উদ্বিগ্ন নদী বিশেষজ্ঞ থেকে পরিবেশবিদরা। উদ্বেগ ছড়িয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরেও। শুধু তাই নয়, অনেক নদীতেই দেখা যাচ্ছে ডলোমাইটের পুরু স্তর। আর তার জেরে সেই নদী তার জলধারণ ক্ষমতা হারিয়ে বসে থাকছে। এমনকি নদীর বুকে ও তার পাশে কমছে লতা, গুল্ম, উদ্ভিদের সংখ্যা। হারিয়ে যাচ্ছে মাছ। চরিত্র হারাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ।
ডুয়ার্স মানেই নদী, জঙ্গল আর পাহাড়। পর্যটকদের কাছে এক অপার সৌন্দর্যের হাতছানি। গহীন অরণ্যের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা নদীর পাশে বসে বন্যপ্রাণী দেখার রোমাঞ্চই আলাদা। কিন্তু এই নদী যদি না থাকে জঙ্গল কি রক্ষা পাবে? আর জঙ্গল যদি না থাকে তাহলে বন্যপ্রাণীদের অবস্থাই বা কি হবে? ডুয়ার্সের নদীগুলিতে যেভাবে জলের অভাব দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে এমনই সম্ভবনার কথা ভেবে শিউরে উঠছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠন থেকে শুরু করে আবহাওয়াবিদরা। ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা নদীগুলিতে আগে যে পরিমাণ জল থাকত এখন আর তেমন জলের দেখা মিলছে না। ভুটান থেকে ভেসে আসা ডলোমাইটের স্তর পড়ছে নদীবক্ষে। সেই সঙ্গে হচ্ছে অরণ্য ধ্বংস। কিন্তু এসব নিয়ে তেমন কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নদী বিশেষজ্ঞ থেকে পরিবেশবিদদের দাবি, ডুয়ার্সের নদীগুলি ব্যাপক বিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে। এখন ডুয়ার্সের নদীগুলিতে যে জল দেখা যাচ্ছে না তার মূল কারণ হল বন ধ্বংস হয়েছে। গাছ না থাকার কারণে মাটিতে জল সঞ্চিত হচ্ছে না। বৃষ্টির সময় বিপুল পরিমাণ জলরাশি পাহাড় থেকে নেমে আসছে। পাহাড়ে ধস ও সমতলে বন্যার সৃষ্টি করছে। ডলোমাইট মিশ্রিত মাটির প্রলেপ বসিয়ে দিচ্ছে। খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় পুরো পরিস্থিতিটি রয়েছে। এখনই যদি কোনও সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ না করা যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায় বছর দশেক আগে থেকেই বক্সাদুয়ারের সান্তালাবাড়ি, জয়ন্তী হয়ে আরও পূর্ব দিকে চামুর্চি সহ ডুয়ার্সের বহু এলাকার নদীতে জল না থাকার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ভুটান পাহাড় থেকে ভেসে আসা ডলোমাইটের কারণে মাটির ওপরে প্রভাব পড়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা অরণ্য অঞ্চলের মাটিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই একটা শুষ্কতা এসেছে। মাটির এই শুষ্কতাকে ‘এডাপিক ড্রউটনেস’ বলা হয়। যা সাধারণ খরা নয়। অথচ মাটিতে খরা চলছে। এই কারণে অরণ্যের জীববৈচিত্রের ওপরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে। যুগ যুগ ধরে অরণ্যের বড় বড় গাছের পাশাপাশি ভূমিসংলগ্ন এলাকায় লতা, গুল্ম, ঘাস প্রভৃতি থাকত। কিন্তু সেখানে শুষ্কতা দেখা দেওয়ায় ছোট উদ্ভিদের পরিমাণ অনেকটাই কমে গিয়েছে। এরফলে জীব বৈচিত্র কমে গিয়েছে। ডুয়ার্সের বুকে বহু নদী সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণ প্রজাপতি থাকত। তার সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমেছে। একইভাবে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যও কমেছে। শাল গাছের ওপরেও এর প্রভাব পড়ছে। মাটির চরিত্র পরিবর্তন হওয়ার কারণেই এসব সমস্যা হচ্ছে। এদিকে, বন ধ্বংস হওয়ার কারণে মাটির জল ধারণ ক্ষমতাও ব্যাপক হারে কমেছে। এসবের কারণে বৃষ্টি থামলেই নদীর জল আর নদীতে থাকছে না। নদী শুষ্ক আকার ধারণ করছে।