গ্রেফতারি আর হানাদারি না ব্যুমেরাং হয়, চর্চা পদ্মের অন্দরেই
নিজস্ব প্রতিনিধি: রামমন্দির নির্মাণ হয়ে গিয়েছে। CAA লাগু হয়ে গিয়েছে। মুখে খোদ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দিয়েছেন, ‘আবকে বার ৪০০ পার’। দেশের সব মিডিয়া হাউসের দাবি, ২৪’র ভোটে(Loksabha Election 2024) জিতে কেন্দ্রের ক্ষমতায় আবারও ফিরতে চলেছেন শ্রীমান মোদিজি(Narendra Modi)। তাহলে তারপরেও কেন এত আগ্রাসী মনোভাব? কেন বেছে বেছে শুধুমাত্র বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীদেরই গ্রেফতারি? কেন বেছে বেছে বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হানাদারি? কেনই বা কংগ্রেসের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ক্লোজড? যদি জয়ের রাস্তা এতই মসৃণ হয়, এতই আত্মবিশ্বাস পূর্ণ হয়, তাহলে এই বিরোধী নিকেশ মনোভাব কেন? প্রশ্ন ঘুরেছে দেশজুড়ে। আর তার থেকেও বড় কথা এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে খোদ পদ্ম শিবিরের অন্দরেও। এত গ্রেফতারি আর হানাদারি শেষে ব্যুমেরাং হবে না তো? মানুষ মুখ বুজে এইসব মেনে নেবেন তো? উত্তর মিলবে ৪ জুন। আপাতত তাই শুধুই জল মাপার খেলা।
২০১৪ এবং ২০১৯— দুই লোকসভা নির্বাচনেই জয়ী হয়েছে বিজেপি(BJP)। দেশের ভোটাররা বেছে নিয়েছেন পদ্ম শিবিরকেই। এখন ঢাক ঢোল পিটিয়ে চলছে প্রচার, এসে গিয়েছে অমৃতকাল, মোদির গ্যারেন্টি, আব কে বার ৪০০ পার। নিরন্তর সামনে আসছে নানান সমীক্ষা। তাতে কোথাও দাবি করা হচ্ছে, বিজেপি একাই পাবে ৪০০। কোথাও বা বলা হচ্ছে, এনডিএ পাবে ৪০০। বিরোধীদের কেউ দিচ্ছেন ১৫০ আসন, কেউ দিচ্ছেন ১০০, কেউ বা তারও নীচে। প্রশ্ন যদি এই সব সমীক্ষাই বাস্তব চিত্র হয়, তাহলে তো ভয়ের কোনও কারণ থাকা কথা নয় মোদি-শাহের(Amit Shah)। তাহলে এত এগিয়েও থেকেও কেন বিরোধীদের নিকেষের মনোভাব নিয়ে এই হানাদারি, গ্রেফতারি? এইসব তো করা হয় মাঠ ফাঁকা করতে, ফাঁকা মাঠে গোল দিতে! তাহলে মোদি-শাহ কী সেটাই চাইছেন? ফাঁকা মাঠে গোল দিতে? সেটাই যদি হয় তাহলে তো স্বীকার করে নিতেই হয়, ঐক্যব্দধ বিরোধী শিবিরকে হারাবার মুরোদ নেই তাঁদের। বরঞ্চ বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের সামনে তাঁরা নিজেরাই মুখ থুবড়ে পড়ার ভয় পাচ্ছেন। আর তাই গ্রেফতারি আর হানাদারিতেই ভরসা খুঁজে পাচ্ছেন।
কিন্তু এত কিছু করেও কী জয় নিশ্চিত হবে? প্রশ্ন ঘুরছে খোদ পদ্মের অন্দরে। অনেকেই কিন্তু ভয় পাচ্ছেন, কেন্দ্রের এই আগ্রাসী মনোভাব মানুষ মেনে নেবে না। মানুষ এই স্বৈরতন্ত্রী আচরণের জবাব দেবে। দেশের একের পর এক বিজেপি বিরোধী দলের নেতা-মন্ত্রীকে জেলে পাঠিয়ে অবাধে সব আসন জয়ের কৌশল নেওয়ার পথে হাঁটার কৌশল শেষে ব্যুমেরাং হয়ে যাবে না তো? এই প্রশ্নই এখন বিজেপির অন্দরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তেলেঙ্গানা থেকে তামিলনাড়ু, বাংলা থেকে বিহার, দিল্লি থেকে মহারাষ্ট্র, সর্বত্র। বিজেপির অনেকেই মনে করছেন, যেভাবে দুর্নীতি ঠেকাও অস্ত্রে এই সব গ্রেফতারি ও হানাদারি চলছে তা প্রাথমিক ভাবে মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষময় হয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র বেছে বেছে যেভাবে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদেরই টার্গেট করা হচ্ছে তা এখন মানুষের মনে শুধু প্রশ্নই তুলে দেয়নি, কার্যত তাঁরাও বুঝতে পারছেন সবটাই হচ্ছে রাজনীতির খেলা। গায়ের জোরতে ২৪’র ভোটে জিততে চাইছেন মোদি-শাহ। আর এটাই হয়তো শেষ পর্যন্ত তাঁদের পতন ডেকে আনতে পারে। বিরোধীদের পক্ষেই দেশজুড়ে হাওয়া তুলে দিতে পারে। দুর্নীতির লড়াই যেখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চেহারা নেয়, সেখানে পতন নিশ্চিত।