মমতার সক্রিয়তায় থরহরি কম্পমান রাজ্য প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি ঘুমিয়েছিলেন না। তবে অবশ্যই ভোটের কারণে তাঁকে দীর্ঘ ৪ মাস হাতগুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বাস করেছেন রাজ্যের আমলাকূলকে। কিন্তু সবাই সেই বিশ্বাসের মর্যাদা ধরে রাখতে পারেননি বা ধরে রাখেননি। তারই ছাপ পড়েছে প্রশাসনিক কাজকর্মে। ধাক্কা লেগেছে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তিতে। আর তাই গত ১১ জুন নবান্নে(Nabanna) প্রশাসনিক বৈঠক করে নিজের যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি, মানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি এখন যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তা দেখে এখন রীতিমত থরহরি কম্পমান দশা রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত নানা দফতরের আমলা থেকে আধিকারিকদের। কেননা একের পর এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তুলোধোনা করছেন বিভিন্ন দফতরের আমলাদের। সরকারি জমি বেদখলের খতিয়ান থেকে শুরু করে পুর পরিষেবার সাতসতেরো তলবও করছেন। পূর্ত হোক বা বিদ্যুৎ— পুরোনো প্রকল্পের নথি চাওয়া হচ্ছে সকলের কাছে। এতেই ত্রাহি মাম ত্রাহি মাম দশা প্রশাসনের অন্দরে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী এখনও বিভিন্ন দফতরের আমলা থেকে আধিকারিকদের কাছ থেকে তথ্য খতিয়ান তলব না করলেও যে কোনও সময় তা করতে পারেন পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজ্যের সব দফতরের সচিবরা। তার ফলে সিংহভাগ দফতরে নির্দেশ চলে গিয়েছে, সব কিছু অবিলম্বে Up to Date করে ফেলতে হবে। কোন প্রকল্প কী অবস্থায় রয়েছে, তার তথ্য যেন হাতের নাগালের মধ্যে থাকে থাকে। আপাতত সেই কাজকেই পাখির চোখ করে নাওয়া খাওয়া ভুলে লেগে রয়েছেন রাজ্যের সব দফতরের সচিব থেকে আধিকারিক মায় কর্মীরাও। লোকসভা ভোটের পাট চুকতেই ১১ জুন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকেই তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন আপাতত তাঁর লক্ষ্য কী। সেই বৈঠকে মমতার তোপে পড়ে পুলিশ থেকে আমলারা। তাঁদের সাবধানবানী শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আপনারা ভাবছেন আমি কিছু দেখছি না! সবার ওপরেই কিন্তু নজর রয়েছে আমার।’
এই সাবধানবাণীর পরেই ১০ দিনের মধ্যে ২টি Review Meeting করে ফেলেন মমতা। সেখানেও পুলিশ আর প্রশাসনের আধিকারিকদের ধমক শুনতে হয়। নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, প্রতিটি বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী এখন এমন ছোটখাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোঁজখবর করছেন, যেগুলি সম্পর্কে আপডেটেড না থাকলে উত্তর দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে সকলের পক্ষে। এখন তিনি এমন কয়েকটি দফতর ধরে ধরে খোঁজ খবর করছেন যেগুলির সঙ্গে সরকারি প্রকল্পের সরাসরি যোগ রয়েছে। আগামী দিনে অন্য দফতরগুলির তথ্যও যে তিনি তলব করবেন না, এমন নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন দফতরে আপাতত যে তথ্যগুলির খোঁজ পড়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সেই প্রকল্পগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, প্রকল্প শেষ না হলে তা কেন হয়নি, প্রশাসনিক গাফিলতি বা স্থানীয় সমস্যার জন্য প্রকল্প আটকে থাকলে, তার বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যাও চাইছেন তিনি।