৫৩তম জন্মদিন পার, প্রাপ্য শুধুই হার, প্রশ্ন বঙ্গ বিজেপিতেই
নিজস্ব প্রতিনিধি: গতকাল ছিল ১৫ ডিসেম্বর। তাঁর ৫৩তম জন্মদিন। সে ভালো কথা। কিন্তু দলবদলের পরে তিনি পেলেন কী আর দিলেনই বা কী? হ্যাঁ এখন তিনি অবশ্যই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সেই সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) অন্যতম মাথাও। কিন্তু দলবদলে এতকাল পর্যন্ত তিনি দলকে দিয়েছেন কী? তাঁর জন্মদিনে তাঁকে ঘিরেই এই প্রশ্ন ঘুরেছে দিনভর বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। নজরে শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। গতকাল ছিল তাঁর ৫৩তম জন্মদিন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই জুটেছে শয়ে শয়ে শুভেচ্ছা বার্তা। অনুগামী ও অনুগতদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু ফুলবদলে তিনি পেলেনই বা কী, দলকে দিলেনই বা কী, তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বঙ্গ বিজেপিতে। করছেন তাঁরাই যারা পদ্মশিবিরে শুভেন্দু বিরোধী। যারা মনে করেন, তিনি আসার পর গোটা দলটাকেই ছিনতাই করে নিয়েছেন। দল তাঁকে কার্যত তাড়িয়েই দিয়েছেন আদি নেতাকর্মীদের। ক্ষোভে অনেকে বসেও গিয়েছেন। আজ তাঁরাই সব হিসাব কষতে বসেছেন। সেই হিসাবই বলছে, একের পর এক নির্বাচনে হার ভিন্ন শুভেন্দু কিছুই দিতে পারেননি বিজেপিকে। কথাটা কিন্তু খুব একটা ভুলও নয়।
শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন উনিশের লোকসভা ভোটের মুখে। সেই নির্বাচনে বিজেপি বাংলা থেকে ঐতিহাসিক সাফল্যের মুখ দেখেছিল। জিতেছিল ১৮টি লোকসভা কেন্দ্র। কিন্তু সেই জয়ের কৃতিত্ব কুড়িয়েছেন নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi) আর দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)। সেখানে ছিঁটেফোঁটা কৃতিত্বের ভাগীদার হতে পারেননি শুভেন্দু। একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি সাফল্য পেয়েছিল। বাংলায় সেই প্রথম ৭৭টি বিধানসভা আসন এসেছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু সেখানেও কৃতিত্বের ভাগ নিতে পারেননি শিশিরপুত্র। সেখানেও ভাগ বসিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও দিলীপ ঘোষ। সেই নির্বাচনের পর থেকেই বাংলায় বিরোধী দলনেতা হয়ে উঠেছেন শুভেন্দু। হয়েছেন বঙ্গ বিজেপির অন্যতম ভরকেন্দ্রও। কিন্তু দল তো তাঁর কাছ থেকে ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক নির্বাচনে হার ভিন্ন আর কিছুই পায়নি। একুশের ভোটের পরে একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছে। কোনওটিতেই জয়ের মুখ দেখতে পারেনি বিজেপি। এমনকি একুশের ভোটে জেতা দিনহাটা, শান্তিপুর, ধূপগুড়ি – এই ৩ বিধানসভা কেন্দ্রই খুইয়ে বসে আছে বিজেপি। হার হয়েছে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও। সেই আসনও নিজেদের হাত থেকে হারিয়েছে বিজেপি।
বাংলায় নিরন্তর ক্ষয়ে চলেছে পদ্মশিবির। একের পর এক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। সেই ভাঙন ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। একুশের ভোটের পরে হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের ৬টি পুরনিগমের নির্বাচন। সেখানেও চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ বিজেপি। হয়েছে শতাধিক পুরসভার নির্বাচন। সেখানে কংগ্রেস ঝালদায় জয়ের মুখ দেখলেও বিজেপি কোথাও জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। কার্যত সেই সাফল্যের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি পদ্মশিবির। হয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন, জিটিএ নির্বাচন। সেখানেও হার ভিন্ন কিছুই মেলেনি বিজেপির। চলতি বছরেই হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেখানেও হেরেছে বিজেপি। গুটিকয়েক পঞ্চায়েত সমিতি আর শো দুয়েক গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া আর কিছুই যায়নি বিজেপির ঝুলিতে। এমনকি শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতেও দাপট দেখিয়ে জেলা পরিষদ ও তিন চতুর্থাংশ পঞ্চায়েত সমিতি ও একই হারে গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। মানে নিজের জেলাতেও চূড়ান্ত ব্যর্থ শিশিরপুত্র।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন(General Election 2024)। শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী দুইজনই সাংসদ। সম্ভবত দুইজনকেই এবার প্রার্থী করবে বিজেপি। সেই হিসাবে এবার ঘরের লোকদের সাংসদ পদ রক্ষার দায়দায়িত্ব শুভেন্দুরই। একই সঙ্গে দায় দলকে রাজ্যে জয়ের মুখ দেখানো। শাহি টার্গেট ৩৫। কিন্তু যা অবস্থা বাংলা থেকে ২৪’র ভোটে বিজেপি ৫টি আসনও পাবে কিনা সন্দেহ। খোদ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তাঁদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলার ক্ষমতা দখল তো দূর, ৫টা আসনও পেয়ে দেখাক বিজেপি।’ অর্থাৎ বাংলার মাটিতে আরও একটা হারের মুখ পড়তে চলেছে পদ্মশিবির। আর তিনি কী করছেন? নিত্যদিন দলের সভা থেকে বড় বড় ডায়লগ আউড়ে চলেছেন, হুমকিধমকি দিয়ে চলেছেন, হেন ক্যারেঙ্গা তেন ক্যারেঙ্গা বলে চলেছেন। আর থেকেই থেকেই আদালতে ছুটছেন মামলা করতে। তাতে লাভ কী হচ্ছে? এখন তো বঙ্গ বিজেপির অনেকেই মনে করছেন শুভেন্দুর জন্যই দলকে বার বার হারতে হচ্ছে একের পর এক নির্বাচনে। তাঁর জন্যই দলের সংগঠনে ধস নেমেছে।