লোকসভা নির্বাচনের পরে শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষেরা পেতে পারেন জাতিগত শসংসাপত্র
নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘শিয়ালগিরি’(Sialgiri) ভারতীয় উপমহাদেশের একটি লুপ্তপ্রায় সম্প্রদায় বা জনজাতির নাম। প্রায় ২৫০ বছর ধরে এই যাযাবর শ্রেণির মানুষরা কেবলমাত্র মেদিনীপুর জেলায় বাস করত। আজও দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর(Paschim Midnapur) জেলার খড়গপুর মহকুমার ওড়িশা সীমানায় অবস্থিত দাঁতন ও মোহনপুর থানায় এদের বসতি। তবে বাংলার পাশাপাশি ওড়িশার বালিয়াপাল, ভোগরাই ও সুগো অঞ্চলেও এদের বসবাস চোখে পড়ে। দুই রাজ্য মিলিয়ে শেষ জনসুমারি অনুযায়ী প্রায় ৭ হাজার মানুষের বসবাস বাংলা-ওড়িশা সীমানা জুড়ে। ব্রিটিশ আমলে এরা গুজরাত-মধ্যপ্রদেশ সীমানার ‘ভিল’ জনজাতির একটি শাখা হিসাবে চিহ্নিত হলেও পরবর্তীকালে অনেকেই এদের মারাঠা বর্গীদের সঙ্গে আসা জংলি উপজাতিদের বংশধর হিসাবে দেখে থাকেন। আর তাঁদের জাতিগত সত্ত্বা নিয়ে এই প্রশ্ন থাকায় এরা আজও না তফশিলি জাতি(SC) না তফশিলি উপজাতির মানুষ হিসাবে কোনও স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের(Loksabha Election 2024) পরে পরেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষেরা পেতে পারেন জাতিগত শসংসাপত্র(Caste Certificate)।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক নানা দস্তাবেজ থেকে জানা যায় যে, শিয়ালগিরিরা নিজেদের অতীতকে ধরে রাখতে পারেনি। তাঁরা তাঁদের নিজেদের লোকায়ত সংস্কৃতি, রীতি ও ভাষা ভুলে গিয়েছে বেমালুম। তাই এখন এটা বের করা খুব কঠিন যে এরা ঠিক কোন জনজাতির অংশ এবং এরা এখানে ঠিক কবে এল। কেলার পুরাতন বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছেন যে, একসময়ে শিয়ালগিরিরা বন্যপশুর কাঁচা মাংস খেত, শিকার করত বনের গভীরে, চুরি করে দিন গুজরান করত। এরা নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করলেও এদের মৃতদেহ চিতায় ওঠে না, বরং কবরে যায়। এদের কোনও ধর্মস্থান নেই। বাড়ির এক কোণে কলসিতে সিঁদুর লাগিয়ে এরা বংশপরম্পরায় প্রেত পুজো করতো। যদিও পরে এরা সামাজিক হয়েছে। যাযাবর দিন ত্যাগ করে ঘর বেঁধে বসবাস করতে শিখেছে। তাঁদের সমাজজীবন ও খাদ্যাভাসে এসেছে বহুল পরিবর্তন। নিজেদের সংস্কৃতি, রীতি ও ভাষা ভুলে তাঁরা বাংলা ভাষা, বাংলার মাটিকে আপন করে নিয়েছে। এমনকি তাঁদের পদবিও এখন সব বাঙালিদেরই মতো। কেউ দাস, কেউ পাত্র, কেউ জানা, কেউ বারিক।
এই শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিগত কয় দশক ধরেই জাতিগত শংসাপত্রের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু তাঁদের শিকড়ের ইতিহাস সুদৃঢ় না হওয়ায় সেই দাবি মানেনি বামফ্রন্ট সরকার বা তার আগেকার কংগ্রেসি সরকার। তবে ২০১৭ সালে ওড়িশা সরকার শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষদের তফশিলি জাতির মান্যতা দিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের পরে এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও কিছু পদক্ষেপ করতে পারে। তবে সেটা যে তফশিলি জাতি হিসাবে চিহ্নিত করার পদক্ষেপই হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। যদি পমাণ্য নথির অভাবে তফশিলি জাতির স্বীকৃতি শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষদের না দেওয়া যায়, তাহলে দেখা হবে যে তাঁদের অনগ্রসর শ্রেনীর তালিকা ভুক্ত করা যাবে কিনা। তবে তফশিলি উপজাতির তকমা কোনও ভাবেই মিলবে না।