বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট চান রাহুল, তবে সম্মানজনক
কৌশিক দে সরকার: লোকসভার স্পিকার নির্বাচন সম্পন্ন। তবে সেই নির্বাচন হয়ে গিয়েছে ধ্বনি ভোটের মাধ্যমে। ভোটাভুটির পথে হাঁটেননি প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মহতাব। কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব দুই কমেছে কংগ্রেস(INC) ও তৃণমূলের(TMC) মধ্যে। দেশে তৈরি হওয়া বিজেপি বিরোধী জোট INDIA’র তরফে স্পিকার পদের জন্য এস সুরেশকে প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে সেই নাম ঘোষণা করা হয়েছিল তৃণমূলের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই। আর তার জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছিল জোড়াফুল শিবিরে। রাহুল গান্ধি(Rahul Gandhi) শেষ মহুর্তে বিষয়টি জানার পরে তিনি নিজেই ফোন করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরে রাহুল কথা বলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সঙ্গেও। তৃণমূলের দুই রথীর সঙ্গে কথা বলে বরফ গলাতেও সমর্থ হন রাহুল। ঠিক হয় তৃণমূলের সাংসদরা সুরেশকেই সমর্থন জানাবান। যদিও সেই সুযোগ মেলেনি ধ্বনিভোটে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায়। তবে মন্দের ভালো, রাহুলের ফোনে বরফ গলেছে কংগ্রেস আর তৃণমূলের মধ্যে। আর তার জেরেই তৈরি হয়েছে বাংলায়(Bengal) ২৬’র বিধানসভা নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে জোটের সম্ভাবনা।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার মাটিতে কংগ্রেস আর তৃণমূলের মধ্যে জোটের পথে সব থেকে বড় কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। অন্ধ মমতা আর তৃণমূল বিরোধিতা করে তিনি একুশের ভোটেই দলকে রাজ্য বিধানসভা থেকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিয়েছেন। আর এবারেও সেই একই বিরোধিতা বজায় রেখে সুষ্ঠ ভাবে জোট হতে দেননি দুই দলের মধ্যে। রাহুলও ভেসেছিলেন অধীরের যুক্তিতে। নিট রেজাল্ট লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে একা লড়াই করে তৃণমূল নিজেদের আসন বাড়ালেও বামেদের সঙ্গে জোট গড়েও কংগ্রেসের আসন কমেছে। একইসঙ্গে এখন অধীরের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে অন্তত ৬টি লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছেন। সেই অভিযোগ যেমন তৃণমূল তুলছে তেমনি তুলছেন প্রদেশ কংগ্রেসের অধীর বিরোধীরাও। তৃণমূলের সুরে সুর মিলিয়ে তাঁদের দাবি, অধীর জোট বিরোধিতার পথে অবতীর্ন না হলে রাজ্যে বিজেপির আসন আরও কমে যেত। ১২’র জায়গায় তা হয়তো ৬-এ এসে দাঁড়াতো। এই হিসাব এখন রাহুলেরও চোখে পড়েছে। আর তাই খুব শীঘ্রই বাংলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে অধীরের জায়গায় এমন কেউ আসতে চলেছেন যার কাজই হবে তৃণমূলের সঙ্গে সুষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা বজায় রাখা।
কেন এই পদক্ষেপ? কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট চাইছেন তিনি। তবে অবশ্যই সম্মানজনক পথে। তিনি এটুকু বুঝেছেন, বামেদের হাত ধরে চললে রাজ্য বিধানসভায় হয়তো কংগ্রেসের প্রত্যাবর্তন ঘটবে না। কেননা এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েও বামেরা ১টি আসনেও না জিততে পেরেছে না কোথাও দ্বিতীয় হতে পেরেছে। রাজ্যের মধ্যে মাত্র ১টি বিধানসভা কেন্দ্রে তাঁরা লিড তুলতে পেরেছে। আর এই ঘটনা ঘটেছে, রাজ্যবাসীর মধ্যে তীবত সিপিআই(এম) বিরোধী মনোভাব বজায় থাকায়। কংগ্রেস আগামী দিনে এই জোটে থাকলে তাঁদের পক্ষে বিধানসভায় প্রত্যাবর্তন করা নাও সম্ভব হতে পারে। আর তাই রাহুল চান তৃণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রেখে রাজ্যে কংগ্রেসের পায়ের নীচে জমি এনে দিতে। তাঁর ইচ্ছা, এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার যে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস লিড পেয়েছে সেই ১১টি আসন তৃণমূল ছেড়ে দিক কংগ্রেসকে বিধানসভায় লড়াই করার জন্য। একান্তই এই জোট না হলে কংগ্রেস তখন বামেদের সঙ্গেই থাকবে বা যেতে বাধ্য হবে।
রাহুল যে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের দাবি করছেন সেগুলি হল উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার চাকুলিয়া, মালদা জেলার চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, মালতিপুর, রতুয়া, মোথাবাড়ি, সুজাপুর এবং মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা, সামসেরগঞ্জ, লালগোলা ও বহরমপুর। ঘটনা হচ্ছে, এই ১১টি আসনের মধ্যে তৃণমূলে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ১০টি আসনে জিতে বসে আছে। কেবলমাত্র বহরমপুরে জিতেছে বিজেপি। রাহুলের যুক্তি, তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্মানজনক জোট হলে ২৬’র বিধানসভা নির্বাচনে আসন প্রাপ্তি কমবে বিজেপিরও। এবারের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৯০টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে আছে বিজেপি। দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস ও তৃণমূলে জোট হলে বিজেপির এই এগিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা কমে ৬১ হতো। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা এখনই কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে নারাজ এই রাজ্যে। কেননা তাঁদের সিপিএম পীরিত চট করে যাওয়ার নয়। আবার সম্মানজনক জোটের কথা বলে ৯০টা আসন ছাড়ার দাবিও মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই মমতা আপাতত এটা দেখতে চাইছেন জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কোন খাতে বইছে, বামেদের সঙ্গে এ রাজ্যে তাঁদের সম্পর্কে কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারপর পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা।