মমতার ঘোষিত রেল প্রকল্পের পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে রেলকর্তারা
নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) রেলমন্ত্রী থাকাকালীন পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার নন্দীগ্রাম থেকে বাজকুল বা দেশপ্রাণ স্টেশন পর্যন্ত নতুন রেলপথের(Nandigram Deshpran Rail Project) ঘোষণা করেছিলেন। ২০১০সালের ৩০জানুয়ারি নন্দীগ্রাম স্টেট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন মাঠ থেকে এই প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছিল। ওইবছর ৮জুন নতুন রেলপথের জন্য মোট ৯১কোটি ৬৫লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। সেই কাজ অনেকটাই এগিয়েছিল। কিন্তু, কেন্দ্রে সরকার বদলের পর ওই প্রকল্প ধামাচাপা পড়ে যায়। এদিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি সেই প্রকল্পের অবস্থা খতিয়ে দেখতে গিয়ে বাজকুলে(Bajkul) জমিদাতাদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রেল কর্তারা(South Eastern Railway Officers)। এখন নন্দীগ্রাম থেকে বাজকুল পর্যন্ত রেল লাইন পাতার কাজ চলছে। অভিযোগ, জমির দাম সকল জমি মালিকরা পাননি। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অনেকে চাকরি পাননি। তার জেরেই এদিনের এই বিক্ষোভ। আপাতত বন্ধ রয়েছে রেলের কাজ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছেন রেল কর্তারা।
মমতার ঘোষিত রেল প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১৮কিলোমিটার। তার জন্য ১০৩৭টি প্লটে মোট ১৯৪একর ৩৪শতক জমি অধিগ্রহণ করা দরকার। রেলের হিসেব অনুযায়ী, ৯৪৩টি প্লটে ১৬৪একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য মোট দু’হাজার জনকে রেলে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, বাস্তবে ৪৪৪জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাজকুল থেকে নন্দীগ্রামের মাঝে মোট ৫টি স্টেশন হওয়ার কথা। নির্মাণ করতে হবে ২টি বড় ব্রিজ ও ৫৭টি ছোট ব্রিজ। এছাড়া মোট ২টি রেলওয়ে ওভারব্রিজ ও ৩৮টি রেলের কোয়ার্টারও হওয়ার কথা। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে এই প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন দক্ষিণ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অনিলকুমার মিশ্র। সেই পরিদর্শনের পরে রেল বোর্ড ওই প্রকল্পের জন্য আরও ২০৬কোটি টাকা মঞ্জুর করে। তারপরই বাজকুলের দিক থেকে কাজ শুরু হয় লাইন পাতার। কিন্তু মাঝপথেই সেই কাজ থমকে গিয়েছে জমিদাতাদের বিক্ষোভে।
গত ডিসেম্বর মাসে নন্দীগ্রামের বটতলা থেকে হরিপুর পর্যন্ত নির্মাণ সংস্থা কাজে নামতেই বাধা বিপত্তি আসছে। জমি মালিকরা কেউ ক্ষতিপূরণ আবার কেউ চাকরি ইস্যুতে জমিতে মেশিন নামাতে দিচ্ছেন না। অগত্যা নির্মাণকারী সংস্থা মেশিনপত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এভাবে কয়েকদিন চলার পর সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই খবর রেলকর্তাদের কানে যেতে এদিন ফের অনিলকুমার মিশ্রের নেতৃত্বেই রেলের কর্তারা নন্দীগ্রামে যান প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে। রেলের কর্তারা এলাকায় আসছেন পরিদর্শন করতে সেই খবর পেয়েই জমিদাতারা বাজকুলে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। রেল পুলিশের তরফে কোনও ভাবে সেই বিক্ষোভ সামাল দেওয়া হয়।
নির্মাণ সংস্থার কর্মীদের দাবি, এখন অধিগৃহীত জমিতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। কিন্তু, অনেক চাষি তাঁর জমির ওপর কাজ করতে দিচ্ছেন না। এই অবস্থায় আপত্তি আসা জমি থেকে মেশিন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নন্দীগ্রামের বটতলা মৌজায় প্রস্তাবিত নন্দীগ্রাম স্টেশন হওয়ার কথা। সেখানে স্টাফ কোয়ার্টার থেকে স্টেশন রুম এবং লাইন পাতার কাজ অনেকটাই এগনোর পরও থমকে গিয়েছে। ওই প্রকল্পে জমিদাতাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের অনেকে নিয়োগপত্র পেয়েছেন। শুধু যে বড় অংশের জমিদাতা আজও চাকরি পাননি তা নয়, জমির দাম নিয়েও জট পাকিয়ে রয়েছে।