Rath Yatra 2024: পুরীর মন্দিরে থাকা দেবী বিমলা কে জানেন?
নিজস্ব প্রতিনিধি: আদ্যাস্তোত্রে বলা হয়েছে -
রামেশ্বরী সেতুবন্ধে বিমলা পুরুষোত্তমে,
বিরজা ঔণ্ড্রদেশে চ কামাখ্যা নীল পর্বতে।।
শ্রীক্ষেত্রে রহস্যের ভান্ডার এই বিমলা দেবীর মন্দির। মহাপ্রভু জগন্নাথ বৈষ্ণব মতে পূজিত হলেও এই শ্রীক্ষেত্রেই জাগ্রত শক্তিপীঠ বিমলা। কালিকা পুরাণে তন্ত্র-সাধনার কেন্দ্র হিসেবে যে চারটি পীঠের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি চার দিকে অবস্থিত। এর মধ্যে পশ্চিম দিকের পীঠটি হল ওড্ডীয়ন বা উড্ডীয়ন (বর্তমান ওড়িশা) অঞ্চলের কাত্যায়নী তথা বিমলা। এই শক্তিপীঠের ভৈরব হলেন স্বয়ং শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভু ।
বিমলাকে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে কাত্যায়নী, দুর্গা, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী অর্থাৎ দেবী পার্বতী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরের দুর্গাপূজায় তাকে একাধারে শিব ও বিষ্ণুর শক্তি মনে করা হয়। নয়াদিল্লির জাতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত কোনারক সূর্যমন্দিরের একটি পাথরে বিমলাকে মহিষাসুরমর্দিনী বা বিজয়লক্ষ্মী রূপে অঙ্কণ করা হয়েছে।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই স্থানে সতীর নাভি পড়েছিলো। মতান্তরে, দেবী পুরাণ মতে, এই পীঠে সতীর পা পড়েছিল। ওড়িশাবাসী হিন্দুরা বিমলা মন্দিরকে প্রধান শাক্ত তীর্থ মনে করেন। জগন্নাথ মন্দিরের নিয়মানুসারে মূল মন্দিরে জগন্নাথকে পূজার আগে বিমলাকে পূজা করতে হয়। তান্ত্রিসাধকদের কাছে বিমলা মন্দিরের গুরুত্ব জগন্নাথ মন্দিরের চেয়েও বেশি। মহাপ্রভু জগন্নাথের মূল উৎসব জামিন রথযাত্রা, ঠিক তেমনই বিমলা মাতার মূল উৎসব হল দুর্গাপূজা। এই মন্দিরে ১৬ দিন ধরে দুর্গাপূজা চলে। রাজা প্রথম নরসিংহদেব বিজয়াদশমীর দিন দুর্গা-মাধব অর্থাৎ বিমলা ও জগন্নাথের পূজা করেছিলেন। হিন্দুদের প্রচলিত বিশ্বাস, দুর্গাপূজার সময় বিমলা ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করেন। তাই সেই সময় তাঁকে শান্ত করতে আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়।
দুর্গাপূজার সময় বিমলা মন্দিরে খুব ভোরে গোপনে পাঁঠাবলি দেওয়া হয়। অপরদিকে জগন্নাথ মন্দিরের প্রাচীন প্রথা অনুসারে, মেয়েদের "দুর্বল-হৃদয়" মনে করা হয়। তাই বিমলার ধ্বংসাত্মিকা রূপ মহিষাসুরমর্দিনীর পূজা হয় বলে, বিমলা মন্দিরে দুর্গাপূজা মেয়েদের দেখতে দেওয়া হয় না। এই সময় স্থানীয় মার্কণ্ড মন্দিরের পুকুর থেকে মাছ ধরে এনে সেই মাছ রান্না করে তান্ত্রিক মতে বিমলাকে নিবেদন করা হয়। এই সব অনুষ্ঠান ভোরে জগন্নাথ মন্দিরের দরজা খোলার আগেই সেরে ফেলা হয়। তাই সে সময় জগন্নাথ মহাপ্রভুর বৈষ্ণব ভক্তদের বিমলা মন্দিরে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয় না। এই আমিষ ভোগ রান্নার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ আলাদা করে করা হয়। তবে অন্যান্য সময়ে সাধারণত মা বিমলার জন্য আলাদা ভোগ রান্না করা হয় না। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, বিমলা জগন্নাথের উচ্ছিষ্ট প্রসাদই গ্রহণ করেন। তাই জগন্নাথ মন্দিরে নিবেদিত নিরামিশ ভোগই বিমলাকে নিবেদন করা হয়। জগন্নাথের প্রসাদ বিমলাকে নিবেদন করার পরই তা মহাপ্রসাদের মর্যাদা পায়।
তবে, বিমলা মন্দিরে পশুবলি ও আমিষ ভোগ নিবেদন নিয়ে পূর্বে বৈষ্ণবরা একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।