কেষ্টগড়ে ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠা শতাব্দীর হুঁশিয়ারি, ‘দল থেকে তাড়াব’
নিজস্ব প্রতিনিধি: কেষ্ট(Anubrata Mondol) যখন ছিলেন মুক্ত, তখন জেলাতে তাঁর নামে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেত। নিজের দলের লোকেরা তো বটেই, বিরোধীরাও তাঁর মুখের কথার ওপর বেশি কথা বলার সাহস দেখাতো না। কেননা সবাই জানতো ঢাক বাজবে চড়াম চড়াম করে। সঙ্গে থাকবে গুড় বাতাসা আর নকুলদানা। কিন্তু সেই কেষ্টই এখন তিহারের অন্দরে। তাঁর অবর্তমানেই জেলায় হয়ে গিয়েছে লোকসভার ভোট(Loksabha Election 2024)। তাতে জেলার ২টি আসনেই জয়ের মুখ দেখেছে জোড়াফুল শিবির। কিন্তু তারপর সময় যতই এগোচ্ছে, কেষ্ট যেন ক্রমশই ফিকে হচ্ছেন জেলার রাজনীতিতে। কমছে কেষ্ট নির্ভরশীলতা। আর সেই সুযোগেই সুর চড়াচ্ছেন জেলার সাংসদ। ছবি যেন বলে দিচ্ছে, বাঘের অনুপস্থিতিতে কেউ কেউ শূন্যস্থান পূরণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। কেষ্ট’র আমলে যারা মুখ ফুটে একটাও কথা বলতো না, তাঁরা এখন দলের নেতাকর্মীদেরই হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ‘দল থেকে তাড়াব’। নজরে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ(TMC MP) তথা টলি নায়িকা শতাব্দী রায়(Satabdi Roy)।
একুশের ভোটের সময় মুক্তই ছিলেন বীরভূম(Birbhum) জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল থুড়ি ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কেষ্ট’। সেই নির্বাচনে জেলার ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১০টিতেই জয়ের মুখ দেখেছিল তৃণমূল। বিজেপি জিতেছিল একমাত্র দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে, সেটাও হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে। এবারে বীরভূমের মাটিতে লোকসভা নির্বাচন হয়েছে কেষ্টকে ছাড়াই। আর তারপরে পরেই সেই দুবরাজপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে শতাব্দী রায় দলেরই বিপথগামী নেতাকর্মীদের দিলেন কড়া হুঁশিয়ারি, ‘দলে থেকে যাঁরা অন্য দলের হয়ে ভোট করিয়েছে তাদের দল থেকে তাড়াব।’ কেষ্ট জমানায় এই সব হুঁশিয়ারি দেওয়ার কথা কেউ যেমন ভাবতেও পারতো না, তেমনি দলে থেকে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার দুঃসাহসও কেউ দেখাতো না। আর তার জেরেই এখন প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে, দল কী এবার কেষ্ট নির্ভরতা কাটিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছে? সাবলম্বী হয়ে উঠতে চাইছে? সেই কারণেই কী কেষ্ট জমানায় পর্দার আড়ালে থেকে যাওয়া শতাব্দী রায় ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠে দলের হাল নিজের হাতে তুলে নিতে চাইছেন!
দুবরাজপুর বিধানসভার অন্তর্গত খয়রাশোলে গিয়েছিলেন শতাব্দী। সেখানেই তিনি যা হুঁশিয়ারি দেওয়ার তা দিয়ে এসেছেন। আর সেটাও এবারের লোকসভা নির্বাচনে দুবরাজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল লিড পাওয়ার পরে। আগে নয়। আর শতাব্দীর এই মন্তব্যের পরই জল্পনা বাড়ছে জেলায়। শতাব্দী সাফ জানিয়েছেন, ‘আমরা দলের জন্য ভোট করি। আগে যা হতো না এবার তাই হবে। যারা দলে থেকে দলের সঙ্গে বেইমানি করেছে তাদের আগে তাড়ানো হতো না। এবার তাদের তাড়ানো হবে। আমি বিরোধীদের সম্মান করি। কিন্তু দলের পদ থেকে হিন্দুদের কাছে বলবে বিজেপিকে ভোট দাও। মুসলিমদের বলবে কংগ্রেসকে ভোট দাও। এইটুকু বলার ক্ষমতা নেই আমি তৃণমূল করি ভাই। আর জেতার পর বলবে দিদি আমি আপনার জন্য পুজো দিয়েছি। এদের জানা আছে আমার। তৃণমূলে পদ আগলে থেকেও যারা বিজেপির হয়ে ভোট করিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এবার তাদের দল থেকে তাড়ানো হবে।’ জেলার ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, কেষ্ট ছাড়াও যে ভোটে জেতা সম্ভব সেটা লোকসভা নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে। আর কেষ্ট’রও চট করে তিহারের বাইরে আসার সম্ভাবনা নেই। আর তাই বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করে নিচ্ছে জোড়াফুল শিবির। শতাব্দী কার্যত সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। কেষ্ট জমানা আজ অতীতের পথে বীরভূমের বুকে।