‘খলিস্তানি’ মন্তব্যে শুভেন্দুতে ক্ষুব্ধ শাহ, বাতিলই করে দিলেন বঙ্গ সফর
নিজস্ব প্রতিনিধি: জোর কা ঝাটকা, মগর ধীরে সে লাগে। এটাই বাস্তব। ধামাখালিতে রাজ্য পুলিশের(West Bengal State Police) কর্তব্যরত ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট(Special Superintendent Intelligence Bureau) জসপ্রীত সিংকে(Jaspreet Singh) উদ্দেশ্য করে ‘খালিস্তানি’ শব্দ(Khalistani Remarks) ব্যাবহার করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে বাংলায় তো বটেই দেশজুড়েও। সেই ঘটনায় পঞ্জাবেও বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধে একাধিক FIR দায়ের হয়েছে। একই সঙ্গে শিখ ধর্মের মানুষেরাও দাবি তুলেছেন, এই মন্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে(J P Nadda) ক্ষমা চাইতে হবে এবং শুভেন্দুকে গ্রেফতার করতে হবে। কার্যত লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই ইস্যুতে শিখ ধর্মের মানুষেরা লাগাতার বিক্ষোভের পথে হাঁটা দিয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে বাংলায়(Bengal) এসে বিক্ষোভের মুখে পড়ার ভয়ে চলতি মাসে অমিত শাহের শাহি সফরই বাতিল করে দেওয়া হল। সূত্রে খবর, ‘খলিস্তানি’ মন্তব্যের কারণে শুভেন্দুর ওপর রীতিমত ক্ষেপে গিয়েছেন শাহ সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
শুভেন্দুর ‘খলিস্থানি’ মন্তব্যের জেরে বাংলা সহ দেশের সব রাজ্যে শিখ ধর্মের মানুষেরা বিজেপির(BJP) বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করায় উদ্বেগের ছবি ধরা পড়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অন্দরে। তার জেরে মঙ্গলবার রাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এক নেতা শুভেন্দুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে গোটা ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। তখনও শুভেন্দু দাবি করেন তিনি ‘খলিস্থানি’ মন্তব্য করেননি। কিন্তু গতকাল দুপুর থেকে সেই ছবিও বদলাতে শুরু করে। কেননা তৃণমূলের তরফে সোশ্যাল মিডিয়াতে একাধিক ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হয় যেখানে শুভেন্দুকে ওই মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে ও শোনাও যাচ্ছে। এরপর শুভেন্দুর দাবি যে সর্বৈব মিথ্যা তা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেও পরিষ্কার হয়ে যায়। গতকাল রাতেই তার জেরে শুভেন্দুকে ফোন করেন জে পি নাড্ডা। সূত্রের খবর তখনই নাড্ডা শুভেন্দুকে এই মন্তব্যের জন্য কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করার পাশাপাশি তাঁকে মুখে লাগাম দেওয়ারও নির্দেশ দেন। স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে শুভেন্দুকে মুখ খুলতে নিষেধও করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই বৃহস্পতি সকালে সামনে এল শাহি সফর বাতিলের ঘটনা। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলায় আসার কথা ছিল শাহের। পরেরদিন অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর মায়াপুরে যাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু এখন সেই সব চলে গিয়েছে বাতিলের খাতায়। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের দাবি, সন্দেশখালিকাণ্ডের জেরেই রাজ্য সফর আপাতত স্থগিত করেছেন শাহ। তিনি নাকি চাইছেন সন্দেশখালির আন্দোলনকে বৃহত্তর রূপ দিক বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। প্রয়োজনে নাকি ‘জঙ্গি’ আন্দোলনের পথেও দলকে হাঁটার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই আন্দোলনে যাতে বিন্দুমাত্র ভাটা না পড়ে তার জন্যই নাকি শাহ তা৬র নিজের সফর বাতিল করেছেন। যদিও শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের এই দাবির স্বপক্ষে বঙ্গ বিজেপির তরফে এখনও কাউকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। বরঞ্চ বিজেপির শুভেন্দু বিরোধী নেতাদের দাবি, শিশিরপুত্রের ওপর রেগেই বাংলা সফর বাতিল করেছেন শাহ। কার্যত এখন দলের অন্দরেই চূড়ান্ত কোনঠাসা দশা হয়েছে শুভেন্দুর। কেননা দলে তাঁর সব থেকে বড় বল ভরসার জায়গা ছিলেন অমিত শাহ যার হাত ধরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন উনিশের ভোটের কয়েক মাস আগেই। সেই শাহই এখন শুভেন্দুতে রীতিমত ক্ষিপ্ত।