রাতেই নিজাম প্যালেসে শেখ শাহজাহানকে জেরা শুরু সিবিআইয়ের
নিজস্ব প্রতিনিধি: শেখ শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়ে সময় নষ্ট করতে নারাজ সিবি আই। ভবানী ভবন থেকে শেখ শাহজাহানকে হেফাজতে নিয়ে সিবিআই অফিসাররা তাকে হাজির করে জোকায় ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে তার শেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এরপর সেখান থেকে চিকিৎসকদের পাওয়া ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে শেখ শাহজাহানকে নিয়ে আসা হয় নিজাম প্যালেসে। রাতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিবিআই(CBI)। ইতিমধ্যে সন্দেশখালি কাণ্ডে ধৃত শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি নতুন করে তিনটি মামলা দায়ের করেছে। অতএব সেই অভিযোগ গুলোর উত্তর খুঁজতে সময় নষ্ট না করে রাতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিবিআই। একাধিক অফিসার প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দেয় শেখ শাহজাহানের দিকে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, সিআইডি(CID) হেফাজতের মতই শেখ শাহজাহান প্রায় সব প্রশ্নের উত্তরে 'জানি না' শব্দটি ব্যবহার করে । তবে ভবানী ভবনের বদলে বর্তমানে শেখ শাহজাহানের ঠিকানা নিজাম প্যালেস। তাই সব প্রশ্নের উত্তর কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাবে বলে মনে করছে। এদিকে, ভবানী ভবনের পেছন দিকের গেট দিয়ে শেখ শাহজাহানকে বের করে পুলিশ নিয়ে যায় এসএসকে হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে চিকিৎসকরা শেখ শাহজাহানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ফিট সার্টিফিকেট দেন। এরপর শেখ শাহজাহানকে কড়া নিরাপত্তায় ফিরিয়ে আনা হয় ভবানী ভবনে। বুধবার সন্ধ্যার পর শেখ শাহজাহানকে(Sk.Sahazahan) আদালতের নির্দেশ মেনে সিবিআই- এর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে ভবানী ভবন। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের নির্দেশ নামা নিয়ে এবং প্রচুর সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান (Central Force)নিয়ে বুধবার দুপুরের পর ভবানী ভবনে পৌঁছে যায় সিবিআই। কিন্তু শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তর করার আগে যেহেতু সে এতদিন সিআইডি হেফাজতি ছিল, তাই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভবানী ভবন।
দুপুরের পর থেকেই ভবানী ভবনের(Bhabani Bhavan) গেট সহ সর্বত্র পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। নামানো হয় র্যাফ বাহিনী। এদিকে ,মঙ্গলবারই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সন্দেশখালিকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এমনকি বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই রায়ের পরেই সন্দেশখালিকাণ্ডের মূল হোতাকে হেফাজতে পেতে ভবানী ভবনে সিআইডি দফতরে যান সিবিআই আধিকারিকরা। কিন্তু দু’ঘন্টার বেশি অপেক্ষা করার পরেও খালি হাতে ফিরতে হয় সিবিআই আধিকারিকদের। সিআইডি আধিকারিকরা জানিয়ে দেন, কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার। ওই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শেখ শাহজাহানকে হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।
বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের(High Court) রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের আর্জিতে কোনও রকম সাড়া দেয়নি শীর্ষ আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানিয়ে দেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এখনই হস্তক্ষেপ করবে না শীর্ষ আদালত। রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির উদ্দেশে বিচারপতি খান্না বলেন, ‘জরুরি শুনানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একমাত্র নিতে পারেন প্রধান বিচারপতি। আপনারা প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন।’ শীর্ষ আদালতে ধাক্কা খাওয়ার পরে শেখ শাহজাহানকে সিবিআইয়ের কাছে তুলে দেওয়া ছাড়া রাজ্যের কাছে বিকল্প কোনও রাস্তা খোলা নেই বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।অন্যদিকে, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে শেখ শাহজাহানকে মঙ্গলবার সিবিআইয়ের হাতে না তুলে দেওয়ায় রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে এদিন ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, বিকেলে সোয়া চারটের মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে শাহজাহানকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে সাড়ে চারটে নাগাদ আদালতের গোচরে বিষয়টি আনারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা।