দিলীপে প্রণিপাত সুকান্ত, এ কিসের ইঙ্গিত, তোলপাড় বঙ্গ বিজেপি
নিজস্ব প্রতিনিধি: একজন প্রাক্তন, অপরজন বর্তমান। সেই প্রাক্তনের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম বর্তমানের। গত ৩ বছরে যা দেখা যায়নি, সেটাই ঘটে গেল মঙ্গলবার সকালে। বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) বর্তমান সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar) নিজে এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার দিল্লিতে নিজে গিয়ে দেখা করলেন দলেরই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের(Dilip Ghosh) সঙ্গে। শুধু দেখা করাই নয়, দিলীপের পায়ে হাত দিয়ে রীতিমত প্রণামও করলেন তিনি। আর সেই ছবি তিনি নিজেই পোস্ট করলেন নিজের ফেসবুক পেজে। আর সেই ছবিই এখন রীতিমত ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। কেননা, একুশের ভোটের পরে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই দিলীপকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই জায়গায় আনা হয় সুকান্তকে। আর সেই সুকান্তের জমানাতেই দিলীপকে দলের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে চূড়ান্ত ভাবে কোনঠাসা করে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অনুগামীদের কাছ থেকেও যাবতীয় পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এদিন সেই দিলীপের পায়ে হাত দিয়ে সুকান্তের প্রণাম বড় ঘটনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে কিন্তু।
প্রশ্ন হচ্ছে কী সেই ঘটনা? বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে কী ফিরছেন দিলীপ? ‘অসম্ভব নয়’, দাবি সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বঙ্গ বিজেপির এক নেতার। সুকান্ত আর দিলীপের সম্পর্ক নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। দিলীপ উনিশের ভোটে জিতে সাংসদ হলেও কেন্দ্রের মন্ত্রীত্ব পাননি। উল্টে একুশের ভোটের পরে তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পদও। আর এবার তো তাঁকে তাঁর নিজ সংসদীয় কেন্দ্র মেদিনীপুর থেকে দাঁড়াতেও দেওয়া হয়নি। পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে লড়াই করতে। সেখানে দিলীপ হেরেও যান। তাই তিনি আর এখন সাংসদও নন। সুকান্ত তো সেই জায়গায় সাংসদ হওয়ার পাশপাশি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তাহলে তিনি এদিন দিল্লিতে নিজ মন্ত্রকের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে সটান কেন চলে গেলেন দিলীপের কাছে? কেনই বা এতদিন বাদে দিলীপের পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন? রসায়নটা ঠিক কী? নিন্দুকদের দাবি, বঙ্গ বিজেপির অন্দরে সম্পর্কের রসায়ন বদলাচ্ছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) সঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের দূরত্ব বাড়ছে। আর সুকান্ত দূরত্ব কমাচ্ছেন দিলীপ ঘোষের সঙ্গে। বাকিটা সময় বলবে। তবে এটা ঘটনা সুকান্ত-দিলীপ এক হলে শুভেন্দু কোনঠাসা হতে বাধ্য।
এদিন সুকান্ত নিজে ছবি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে(Facebook) লিখেছেন, ‘তৃতীয়বারের মোদি সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পূর্বে বিজেপির অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দাদা শ্রী দিলিপ ঘোষ মহাশয়ের কাছে আশীর্বাদ নিলাম। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী জির সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ আর তাই এই লেখা নিয়ে এখন যেমন চর্চা শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে তেমনি দুইজনের ছবি নিয়েও শুরু হয়েছে চর্চা। শেষ কবে সুকান্ত আর দিলীপকে একফ্রেমে, একমঞ্চে দেখা গিয়েছে তা তাঁদের অতি বড় অনুগামীরাও চট করে বলে উঠতে পারবেন না। আর এখানেই প্রশ্ন, হঠাৎ কী এমন হল যে, দিলীপের কাছে ছুটতে হল সুকান্তকে। সুকান্ত-শুভেন্দু জুটির সঙ্গে দিলীপ ঘোষের দ্বন্দ্ব কারও অজানা নয়। একাধিকবার তা প্রকাশ্যেও এসেছে। লোকসভার প্রার্থী নির্বাচনে প্রকট হয়েছে এই দ্বন্দ্ব। এদিকে নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির ভরাডুবির পর শুভেন্দুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। এরই মাঝে দিলীপ-সুকান্ত সাক্ষাত শুভেন্দুকেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা বলে দাবি ওয়াকিবহল মহলের।