নিজের মৃত্যুর খবর আগেই টের পেয়েছিলেন স্বামীজী! জেনে নিন মৃত্যুর দিন কী ঘটেছিল
নিজস্ব প্রতিনিধি : বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেছিলেন মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। তাঁর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হলেও আজও চিরন্তন হয়ে রয়েছে তাঁর অমর বাণীগুলো। বিবেকানন্দের মৃত্যু নিয়ে কোনও রহস্য সেই ভাবে না থাকলেও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু ভিন্ন মত ও ধারণা লোকসমাজে আজও প্রচলিত।
অনেকে ভাবেন কাজ সম্পন্ন করে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পঞ্চভূতে বিলীন হয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ। আবার অনেকেই মনে করেন তিনি মৃত্যুর খবর আগে থেকেই জানতেন তাই তো সহজভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন তিনি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, স্বামীজীর একমাত্র প্রিয় ভক্ত ভগিনী নিবেদিতাকে মৃত্যুর তিনদিন আগেই মৃত্যুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
১৯০২ সালে ২ জুলাই, তিনি নিবেদিতাকে নেমন্তন্ন করে পরম যত্নে নিজের হাতে করে খাইয়েছিলেন। বারে বারে নানাভাবে তাঁর ইঙ্গিত দিলেও কেউই বুঝতে পারেননি যে, স্বামীজী নিজেই মহাপ্রয়াণের কথা বলছেন।
২০০৩ সালে বাঙালী উপন্যাসিক শঙ্কর ‘জানা অজানা বিবেকানন্দ বলে একটি বই লেখেন। সেখানে লেখক লিখেছেন, ৪ জুলাই, স্বামীজীর মৃত্যু ভগ্নী নিবেদিতা স্বপ্নে দেখেছিলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের দেহ দ্বিতীয় বার ধরাধাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই বেলুর মঠের এক শান্ত কামরায় দেহত্যাগ করেছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল ৩৯ বছর পাঁচ মাস ও ২৪ দিন।
স্বামীজি তাঁর অনুগামী স্বামী অভেদানন্দকে মৃত্যুর ৫ বছর আগেই তার মহাপ্রয়াণে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন , তিনি বছর পাঁচেক বাঁচবেন। তাঁর বয়স ৪০ পেরোবে না। কারণ হিসেবে মজার ছলে তিনি বলেছিলেন, তাঁর আত্মা শরীরের তুলনায় বড় হয়ে যাচ্ছে, তাকে (আত্মাকে) আর ধরে রাখা যাচ্ছে না।
মৃত্যুর দিন কী হয়েছিল : ১৯০২ সালের ৪ জুলাই, ছিল তাঁর মহাপ্রয়াণের দিন। এইদিন স্বামীজিকে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ খোশমেজাজে ছিলেন তিনি।অত্যন্ত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন। বেলুড় মঠের প্রার্থনা গৃহে তিন ঘণ্টা ধ্যানও করেছিলেন তিনি।এরপর ছাত্রদের শুক্লা-যজুর্বেদ, সংস্কৃত ব্যকরণ ও দর্শনশাস্ত্র শেখান।পরে স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করেন তিনি, আলোচনা করেন রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যত নিয়ে।
সেদিন সবার সঙ্গে বসে দুপুরে খেয়েছেন ইলিশের নানা পদ। তবে সন্ধে ৭টা নাগাদ নিজের ঘরে চলে যান তিনি। যাবার আগে বলেছিলেন কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে। ধ্যান করতে করতেই রাত ৯টা ১০ মিনিটে আনন্দলোকে যাত্রা করেন স্বামীজী।
তাঁর শিষ্যদের মতে, স্বামীজী মৃত্যুর আগে মহাসমাধি লাভ করেছিলেন। যদিও ডাক্তারি রিপোর্ট অনুযায়ী, মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যাওয়াই মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ডাক্তাররাও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।