DNA পরীক্ষার জন্যে কলকাতায় আসছেন বাংলাদেশের নিহত সাংসদের কন্যা
নিজস্ব প্রতিনিধি: এই মূহুর্তে কলকাতায় বাংলাদেশের সাংসদের পরিকল্পিত খুন নিয়ে রীতিমতো তেতে রয়েছে দু দেশের পুলিশ প্রশাসন। দিন দুয়েক আগেই কলকাতায় তদন্তে এসেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান। এবার বাবার খুনের তদন্তে সাহায্য করতে কলকাতায় আসতে পারেন প্রয়াত সাংসদ-কন্যা। গত দু-দিনের মধ্যেই তাঁর কলকাতায় আসার কথা। চলতি মাসের শুরুতে কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলেন বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম। কিন্তু দেশে ফেরা আর হল না তাঁর। কলকাতার নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে তিনি পরিকল্পিত খুন হন। এমনকি তাঁকে মেরে টুকরো টুকরো করে কেটে ট্রলিব্যাগে বন্দি করে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। আর এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হলেন নিহত সাংসদের ছোটবেলার বন্ধু শাহীন। এখনও তাঁর দেহের টুকরো টুকরো অংশগুলির খোঁজ চলছে। কলকাতা এবং বাংলাদেশের পুলিশি প্রশাশন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছেন। যদিও বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদ সিআইডির কাছে এই ঘটনার তদন্তভার দিয়েছিলেন।
এরপর সিআইডি পুলিশ নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালিয়ে গতকাল সেপটিক ট্যাঙ্ক বর্জ্য নিষ্কাশনের পাইপ থেকে কতগুলি মাংসের টুকরো এবং চুল উদ্ধার করেছে। সিআইডির তদন্তকারীদের সন্দেহ, এগুলি ঝিনাইদহের নিহত সাংসদের হতে পারে। ইতিমধ্যেই নমুনাগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এমনকী সেগুলি আনোয়ারুল আজিমের কি না, তা পরীক্ষার জন্য নিহত সাংসদের কন্যাকে কলকাতায় আসতে বলা হয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যেই কলকাতায় আসার কথা তাঁর। নিহত উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো এবং চুলের ডিএনএ-র সঙ্গে আনোয়ারুলের কন্যার ডিএনএ মিলছে কিনা, সেটাই দেখা হবে। আনোয়ারুলের দুই কন্যা। তাঁদের মধ্যে মুমতারিন ফেরদৌস দরিন কলকাতায় বাবার নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর বাংলাদেশে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ইতিমধ্যেই সাংসদ খুনে ওপার বাংলা থেকে গ্রেফতার হয়েছে তিন জন এবং পশ্চিমবঙ্গে জ়ুবেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে এসেছিলেন এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। এরপর বরানগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এরপর ২২ মে খবর আসে যে, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। তবে ঘরে মেলেনি তাঁর মরদেহ। এরপরেই পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, গত ১৩ মে পরিকল্পিত ও নৃশংসভাবে খুন করে তাঁকে টুকরো টুকরো করে কেটে ট্রলিব্যাগে ভরে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে আরও বিস্ফোরক তথ্য। জানা যায়, সাংসদ খুনের মাস্টারমাইন্ড হলেন আনোয়ারুল আজিমের ছোটবেলার বন্ধু তথা ব্যবসায়িক অংশীদার আখতারুজ্জামান শাহীন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এমপিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। এ ছাড়া এই ঘটনায় সিলিস্তি রহমান নামে এক তরুণীও জড়িত। তাঁকে হানি ট্র্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। সিলিস্তি নিজেকে মূল অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী ছিলেন। আক্তারুজ্জামান শাহীন আনোয়ারুল আজিমকে খুনের জন্য খুনিদের ৫ কোটি টাকা সুপারি দিয়েছিলেন।
ধারণা করা হয়েছে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এই তরুণীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তাই খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে নিজের দুই ঘনিষ্ঠ মোস্তাফিজ ও ফয়সালকে কলকাতায় ডেকে পাঠান শাহীন। ১২ মে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় পৌঁছন আনোয়ারুল আজিম। ১৩ মে কৌশলে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠানো হয় সাংসদকে। সেখানেই ওই মহিলাও উপস্থিত ছিলেন। ফ্ল্যাটে পৌঁছনোর পরে আক্তারুজ্জামান শাহীনের পাওনা টাকা মেটানোর জন্য আজিমকে চাপ দেওয়া হয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হলে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে সাংসদকে হত্যা করা হয়। পরে চাপাতি দিয়ে দেহ টুকরো-টুকরো করে কেটে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের সাংসদ খুনের অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহিন-সহ চার জনের বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিস’ জারি করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে সাংসদের দেহাংশ না মিললে তদন্ত থামানো হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান। সিআইডিকে নতুন কিছু জায়গায় তল্লাশি চালানোরও অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা প্রধান।