দুই বিধায়ককে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন না ডেপুটি স্পিকার
নিজস্ব প্রতিনিধি: নিয়মানুযায়ী বিধানসভার নতুন বিধায়কদের শপথ বাক্য পাঠ করানোর জন্য রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপালের(Governor) অনুমতি নিতে হয়। রাজ্যপাল সেই অনুমতি দেন বিধানসভার অধ্যক্ষ(Speaker of the Assembly) বা স্পিকারকে। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে সেই অনুমতি দেওয়া হয় সহ অধ্যক্ষ বা ডেপুটি স্পিকারকে(Deputy Speaker)। বাংলায় এখন কার্যত রাজ্য সরকার, রাজ্য বিধানসভা এবং রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস(C V Ananda Bose)। রাজ্য বিধানসভার নবনির্বাচিত দুই তৃণমূল বিধায়কের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে তিনি এতটাই কদর্য রাজনীতি শুরু করেছেন যে এদিন তাঁর অনুমতি ছাড়াই দুপুরে রাজ্য বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন শুরু হতে চলেছে। শুধু তাই নয়, তিনি বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Biman Banerjee) বাদ দিয়ে ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Ashish Banerjee) শপথবাক্য পাঠ করানোর দায়িত্বভার অর্পণ করেছেন। কিন্তু এখন আশিস জানিয়ে দিয়েছেন তিনি শপথ বাক্য পাঠ করাবেন না। আর তার জেরে দুই বিধায়কের শপথ জটিলতা অব্যাহত রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনই দুই বিধায়কের শপথ হবে।
তৃণমূলের দুই নবনির্বাচিত বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেনের শপথগ্রহণ নিয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই রাজ্যপালের অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যপাল সেই অনুমতি না দিয়ে বিধায়কদের রাজভবনে আসতে বলেন। সেই সঙ্গে জানান, রাজভবনেই(Raj Bhawan Kolkata) তিনি নতুন দুই বিধায়ককে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। কিন্তু দুই বিধায়কই রাজভবনে যেতে নারাজ। এই অবস্থায় দুই বিধায়ক এবং বিধানসভার অধ্যক্ষ একাধিকবার রাজ্যপালকে চিঠি লেখেন তিনি যাতে রাজ্য বিধানসভা ভবনে এসে দুই বিধায়ককে শপথ বাক্য পাঠ করান। কিন্তু তিনি কোনও কিছুতেই রাজি হননি। সেই থেকেই জটিলতা দেখা দিয়েছে দুই নবনির্বাচিত বিধায়কের শপথ প্রক্রিয়া নিয়ে। তবে হাল ছাড়তে নারাজ রাজ্যের শাসক দলও। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছেন যে, এমনকী রাজ্যপাল যদি বিধানসভার অধ্যক্ষকে দুই বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করানোর অনুমতি না-দেন, সেক্ষেত্রে বিধানসভার বিধি ও সংবিধান মেনে বিকল্প পদক্ষেপ করা হবে।
এরই মাঝে গতকাল রাতে রাজ্যপাল শপথ বাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব দেন বিধানসভার ডেপুটি অধ্যক্ষ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজভবনের তরফে এক বিবৃতিতে তা জানানো হয়। কিন্তু এখন আশিস নিজেই বেঁকে বসেছেন এই শপথ বাক্য পাঠ করানো নিয়ে। কেননা তাঁর দাবি, ‘কলকাতায় যখন স্পিকার উপস্থিত রয়েছেন, তখন আমার শপথবাক্য পাঠ করানো কাম্য নয়। আমি এটা করলে স্পিকারের সম্মানহানি হবে।’ আর তাই জটিলতা অব্যাহত থাকছে রাজ্য বিধানসভার অন্দরে। উল্লেখ্য, এর আগেও বাবুল সুপ্রিয়র শপথগ্রহণের সময়েও ডেপুটি স্পিকারকে দায়িত্ব অর্পণ করেন তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তবে তিনি রাজি না-হওয়ায় রাজ্যপাল স্পিকারকেই শপথবাক্য পাঠ করানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। গতকাল বিমানবাবু এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আইন অনুযায়ী এই বিষয়টির মীমাংসা হবে। বিধানসভা is not helpless to the hand of Governor। শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। যদি কেউ মনে করেন, আমরা অসহায় হয়ে গিয়েছি, এটা তাঁর ভুল ধারণা।’
বিধানসভা সূত্রের খবর, বিধানসভার বিধি ও সংবিধানের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে আজকের বিশেষ অধিবেশনেই শপথগ্রহণ পর্বের ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন বেলা ২টোয় বিধানসভার(West Bengal State Legislative Assembly) বিশেষ অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, রাজ্যপাল ছাড়া কোনও শপথগ্রহণ হয় না, এই ধারণা ঠিক নয়। তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘রাজ্যপাল নিজের সম্মান রেখে যে কাজ করতে পারতেন অথবা করাতে পারতেন, তা না করে তিনি যদি নিজের সম্মান নিজে নষ্ট করেন, তার দায় রাজ্যপালেরই।’ আজকের বিশেষ অধিবেশনেই সায়ন্তিকাদের শপথগ্রহণ পর্ব যদি সম্পূর্ণ হয়, তাহলে তা বিরল নজির তৈরি করবে।