Rath Yatra 2024: স্নানযাত্রার পরে গজানন রূপে ভক্তদের দর্শন দেন মহাপ্রভু
পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায়: শ্রীমদ্ভগবৎ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ সখা অর্জুনকে বলেছিলেন, ‘যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে, তাংস্তথৈব ভজাম্যহম।’ অর্থাৎ, ভক্ত যেভাবে ভগবানের আরাধনা করেন, ভগবানও ঠিক সেভাবেই তাঁকে কৃপা করেন।
এই শ্লোকের পরবর্তী অংশটি হল ‘মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ’ – অর্থাৎ, মানুষ যে পথ ধরেই তাঁর দিকে যাত্রা শুরু করুক না কেন, অন্তিমে সেই ভক্ত তার ইষ্ট দেবতার কাছে পৌঁছায়, তাঁকেই লাভ করেন। প্রভু জগন্নাথের ক্ষেত্রেও ভগবান কৃষ্ণের এই উক্তিটি বিশেষ ভাবে প্রাসঙ্গিক। মহাপ্রভু শ্রীজগন্নাথ জগতের নাথ, তিনি আদি তিনি অনন্ত্য । তাঁর মধ্যেই বর্তমান সমস্ত ধর্ম, দর্শন ও মত। তিনি কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতির দেবতা নন, বরং তিনি গণধর্মের গণদেবতা। তিনি গাণপত্যের গণপতি, বৈষ্ণবের বিষ্ণু, শৈবের শিব, শাক্তর শক্তি, বৌদ্ধর বুদ্ধ, সৌরর সূর্য, তিনিই ভৈরব, তিনিই পুরুষোত্তম।
সনাতন ধর্মের প্রায় সমস্ত সম্প্রদায় জগন্নাথ মহাপ্রভুর মধ্যেই নিজের ইষ্টদেবকে খুঁজে পেয়েছেন। আর তাই এই স্নানযাত্রার পুণ্যলগ্নে ভক্তদের মহাপ্রভু দর্শন দেন গজানন রূপে।পবিত্র স্নান-পূর্ণিমায় রত্ন সিংহাসন থেকে নেমে আসেন প্রভু জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম। স্নানবেদীতে হয় মহাপ্রভুর প্রত্যক্ষ স্নান। মন্দিরে অবস্থিত ‘স্বর্ণ কুণ্ড’ থেকে ১০৮ কলসি জলে সম্পন্ন হয় মহাপ্রভুর স্নান। স্নানযাত্রার শেষ পর্বে আসে সেই মহাক্ষণ যখন গজানন বেশে ভক্তদের দর্শন দেন ভক্তের ভগবান। তবে কেন এই বেশ ? কি কারণে হয়েছিল এই গজানন বেশ ?
শোনা যায়, দক্ষিণ ভারতে গণপতি ভট্ট নামে সিদ্ধিদাতা গণেশের এক পরম ভক্ত ছিলেন। তিনি শুনেছিলেন, শ্রীধাম পুরীতেই আছেন তাঁর ইষ্টদেবতা। আরাধ্যকে দর্শন করার জন্যে তিনি একদিন পৌঁছে গেলেন পুরীর মন্দিরে। গর্ভগৃহে প্রবেশ করে ভক্তপ্রবর রত্ন-সিংহাসনে শ্রীজগন্নাথ দেবকে চাক্ষুষ করলেন। কিন্তু সিদ্ধিদাতা গণেশকে দেখতে না-পেয়ে দুঃখপূর্ণ হৃদয়ে অনেক অভিমান নিয়েই তিনি পুরী ত্যাগ করলেন।
কিন্তু, মহাপ্রভু জগন্নাথ তো ভক্তপ্রেমী, ভক্তের দিকেই বাড়িয়ে থাকেন তাঁর দুই বাহু। তাই মহাপ্রভু গণপতি ভট্টকে মাঝরাস্তায় স্বপ্ন দেওয়ায় আবার তিনি ফিরে এলেন শ্রীক্ষেত্রে। এবারই হল তাঁর দর্শন। জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার পূণ্য তিথিতে স্নান-মণ্ডপে শ্রীজগন্নাথ আর বলরামকে অপূর্ব শোভামণ্ডিত গজাননের বেশে নিজের ইষ্টদেব সিদ্ধিদাতাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। মহাপ্রভু তাঁকে গণপতি রূপে দর্শন দিলেন। ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে, এই গজানন বেশ আরম্ভ হয় মারাঠা শাসনের সময়কাল থেকে । মারাঠাদের আরাধ্য দেবত হলেন সিদ্ধিবিনায়ক গণেশ। তাই তিনি বছরে একবার এই বিশেষ রূপ ধারণ করেন। এর ঠিক পরেই অসুস্থতার জন্য শুরু হয় মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথের নিভৃতবাস।