পার্টিটা Facebook-এই আছে, Booth-এ Face নেই, মেনেই নিল CPI(M)
নিজস্ব প্রতিনিধি: এদিন অর্থাৎ শুক্রবার থেকে বাংলার(Bengal) ৩৪ বছরের শাসক দল CPI(M)’র হাওড়া জেলা দফতর অনিল বিশ্বাস ভবনে শুরু হচ্ছে রাজ্য কমিটির ৩ দিনের বর্ধিত অধিবেশন। তার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৩১ পাতার খসড়া প্রতিবেদন, যা পেশ করবেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম(Mohammad Salim)। সূত্রের খবর, সেখানেই কার্যত এক ঐতিহাসিক সত্যিকে স্বীকার করেই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাংলার বুকে ক্ষমতা হারাবার পরে যেভাবে এ রাজ্যে লাল পার্টির রক্তক্ষরণ ঘটতে ঘটতে ক্ষমতা হারাবার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই রাজ্য বিধানসভা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে সেই পরিস্থিতিতে দলের পক্ষে কোনও ভাবেই যে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না সেটাও মেনে নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কেননা, দলের বুথ স্তরের সংগঠনেই বড়সড় ফাঁক রয়েছে। তা পূরণ না-করতে পারলে কোনও কিছুতেই কিছু হবে না। এতদিন তৃণমূল ও বিজেপি বার বার বামেদের এই দুর্বলতাকেই কটাক্ষ হেনেছে। এবার সেটাই স্বীকার করে নিলেন আলিমুদ্দিনের কর্তারা।
সূত্রে জানা গিয়েছে, CPI(M)’র রাজ্য কমিটির ৩ দিনের বর্ধিত অধিবেশনের জন্য যে খসড়া প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে সেখানে দলের বুথ স্তরে সাংগঠনিক গাফিলতির কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘জনগণকে শামিল করে বুথে বুথে শক্তিশালী সংগঠন করার সিদ্ধান্ত বহু বার গ্রহণ করা হলেও এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আমরা অর্জন করতে পারছি না। বুথ এলাকায় সমর্থক থাকলেও তাঁদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সাফল্য আসছে না। তার কারণ, রাজনৈতিক উপলব্ধি ও সাহসী পার্টি সদস্যদের অভাব। বুথ সংগঠন শুধু ভোটের দিকে তাকিয়ে গড়ে তুললে হবে না। তা সারা বছর নিরন্তর চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দলীয় সদস্যদের একাংশ ফাঁকিবাজি করছেন। তাঁরা ঠিক মতো গণসংগঠনের কাজ করছেন না। শাখা কমিটির স্তরেও যে দুর্বলতা রয়েছে সেটাও চোখে পড়ছে। শাখা স্তরের দুর্বলতা কাটাতে এরিয়া এবং জেলা কমিটির যে নজরদারি রাখা উচিত ছিল, তা সমান ভাবে সব জায়গায় হচ্ছে না। চেক আপের ক্ষেত্রে উচ্চতর কমিটির ভূমিকায় বিস্তর ত্রুটি রয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, এই ৩১ পাতার প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে সিপিএমের কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি ঘটেছে। এখন তৃণমূল, বিজেপি সহ CPI(M)’র বহু নেতা থেকে কর্মী মায় সমর্থকও প্রকাশ্যেই ঠাট্টা করে থাকেন যে বাংলার ৩৪ বছরের শাসক দল বা পার্টিটা এখন Facebook-এই আছে, Booth-এ Face নেই। কার্যত সেই ঠাট্টাকেই স্বীকার করে নিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সামাজিক মাধ্যমে দলের কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি ঘটেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, দলের কর্মসূচিতে তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়লেও পার্টিতে তরুণ প্রজন্মের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নজর কাড়ার মতো কোনও বিষয় নেই। যদিও গত ১৭ অক্টোবর ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সিপিএম আয়োজিত সভায় সেলিম গোটা দলকে বার্তা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের বাচ্চা ছেলে বলে হেলাফেলা করবেন না।’ যদিও লালপার্টির অনেকেই জানিয়েছেন, অল্পবয়সিদের পার্টিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দের বিষয় রয়েছে। সেটাও নাকি দলের রাজ্য কমিটির ৩ দিনের বর্ধিত অধিবেশনের খসড়া প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।