BSF’র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মমতা, খুশি সীমান্তপল্লীর জনতা
নিজস্ব প্রতিনিধি: কারও বাড়ির উঠোনের মধ্যেই দুই বাংলার কাঁটাতার। কারও বাড়ি এপার বাংলায় তো চাষের জমি ওপার বাংলায়। কোনও গ্রামের অর্ধেক এপার ভারতে, তো বাকিটা ওপারের বাংলাদেশে। সেই সীমান্তপল্লী এলাকা ছড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের মোট ১০টি জেলায়। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, দুই দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ নদিয়া এবং দুই ২৪ পরগনা জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে এই সীমানা। সেখানেই মোতায়েন থাকে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা Border Security Force যাকে অনেকেই BSF বলে চেনেন। নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) জমানায় এই বাহিনীকেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে সীমান্ত থেকে ৫০কিমি পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে কারও বাড়িতে কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই তল্লাশি চালানোর। দেওয়া হয়েছে যখন তখন যাকে তাকে গ্রেফতার বা আটক করার ক্ষমতাও। এমনকি গুলি করে কাউকে মেরে দেওয়ারও অঢেল ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই সব কারণেই বাংলার সীমান্তপল্লী এলাকার মানুষদের জীবন তো যাচ্ছেই, বেঁচে থাকাও খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এবার সেই BSF’র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। এক আধ দিন নয়, লাগাতার ভাবে তিনি নিশানা বানিয়ে চলেছেন BSF-কে। আর তাতে খুশি সীমান্তপল্লীর বাসিন্দারা(Border Area People)।
কয়েক দিন আগেই ৫ দিনের জেলা সফর থেকে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জেলা সফরে গিয়ে প্রায় প্রতিটি জেলা থেকেই তিনি BSF’র বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন। প্রতিটি সভা থেকে BSF’র বিরুদ্ধে সীমান্তপল্লী এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ কার্ড বিলির অভিযোগও তুলেছেন। গতকালপ কলকাতার রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে BSF’র বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ‘বর্ডারে বর্ডারে BSF’র অত্যাচার বাড়ছে। নতুন করে একটা কার্ড দিচ্ছে, যা তারা দিতে পারে না। আমরা ডিএমদের বলব, ওরা একটা করে ইনার লাইন পারমিট যদি দেয়, যারা এপাশ থেকে ওপাশে কাজ করে তাঁদের। জেলাশাসক, বিডিও, মহকুমা শাসকরা সেটা দেবেন। ওরা দেবে না। BSF’র কোনও অথরিটি নেই। ওরা স্টেটের কেউ নয়। বর্ডার পাহারা দেওয়া ওদের কাজ।’ এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে গিয়ে সীমান্তপল্লীর বাসিন্দাদের জানিয়েছেন, BSF’র দেওয়া কার্ড না নিতে। ওই কার্ড নিলেই তাঁদের ডিটেনশান ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাঁদের নাগরিক বলে আর স্বীকার করা হবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর এই অবস্থানের জন্য এখন কিছুটা হলেও স্বস্তির শ্বাস নিতে পাচ্ছেন সীমান্তপল্লীর বাসিন্দারা। মনে কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছেন সাহস। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে গিয়ে বলে এসেছেন BSF’র জওয়ানরা কারও ওপর কোনও অত্যাচার করলে জেলা শাসকরা যেন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন। থানায় যেন তাঁরা BSF’র বিরুদ্ধে FIR করেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে BSF’র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন সীমান্তপল্লীর বাসিন্দারাও। তাঁদের দাবি, নিত্যদিন তাঁরা BSF’র হাতে নিগৃহীত হন, অত্যাচারের শিকার হন। পুরুষ-মহিলা কেউই বাদ যান না। মহিলাদের শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের পাশাপাশি পুরুষদের যৌন নিগ্রহের ঘটনাও ঘটে অকাতরে। আর মারধর, ঘরে ঢুকে লুঠপাঠ, আটক, গ্রেফতারি তো রয়েইছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী BSF’র এই অত্যাচার নিয়ে মুখ খোলায় এবার তাঁরাও BSF’র অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।