কুড়মিদের ভোট কার পক্ষে, পুরুলিয়ায় আশায় বুক বাঁধছে তৃণমূল-বিজেপি
নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা ভোটে কার্যত পুরুলিয়া জেলাজুড়ে পদ্মঝড় বয়ে গিয়েছিল। তৃণমূলকে পরাস্ত করে ওই আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। সেই জয়ের নেপথ্যে কাজ করেছিল কুড়মিদের সমর্থন। কিন্তু গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই সেই ছবি বদলেছে। কুড়মিরা সরে এসেছেন পদ্মের পাশ থেকে। এমনকি চলতি লোকসভা নির্বাচনে(Loksabha Election 2024) কুড়মি নেতৃত্বরা(Kurmi Society) না বিজেপিকে(BJP), না তৃণমূলকে(TMC) সমর্থন করার কথা জানিয়েছে। পরিবর্তে তাঁরা নিজেরা নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে পুরুলিয়া সহ জঙ্গলমহলের ৪টি লোকসভা কেন্দ্রে। পুরুলিয়া ছাড়া বাকি ৩ কেন্দ্র হল – বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর। তবে সকলের নজর রয়েছে পুরুলিয়ার দিকেই। কেননা এখানেই রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি কুড়মি ভোট রয়েছে। সংখ্যায় প্রায় ২ লক্ষ। শুধু তাই নয়, এই কেন্দ্র থেকেই নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন কুড়মিদের অন্যতম মাথা অজিত প্রসাদ মাহাতো। তিনি কত ভোট পাবেন আর এই কেন্দ্রে জয়-পরাজয় নিষপত্তির ক্ষেত্রে কোনও ছাপ ফেলতে পারবেন কিনা সেই দিকেই সকলে তাকিয়ে থাকছেন। তবে তাঁর প্রাপ্য ভোট আর তার ছাপ ভোটের ফলাফলের ওপর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পড়লে আগামৈ দিনে কুড়মিরা নিজস্ব রাজনৈতিক দল তৈরির দিকেও হাঁটা দিতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
পুরুলিয়া লোকসভা আসনে কুড়মিদের ভোট কোন দিকে গিয়েছে তা নিয়ে যখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে তখন তৃণমূল ও বিজেপি উভয় দলের দাবি, কুড়মি সমাজের ভোট তাদের দিকে গিয়েছে। তবে কুড়মিদের অভিমত, জাতিসত্ত্বার লড়াইয়ে পঞ্চায়েতের চেয়ে কুড়মি সদস্য বেশি ভোট পেয়েছেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে কুড়মি সদস্য অজিতপ্রসাদ মাহাতো(Ajit Prasad Mahato) বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছিলেন। তাঁর সেই প্রচারে ব্যাপক সাড়াও মিলেছিল। অজিতবাবু জেলার পাড়া বিধানসভা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের কাজ করে আসছেন। সাঁওতালডিহির পাহাড়িগোড়া এলাকায় পাহাড় কেটে পাথরখাদানের কাজ দেখে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এলাকার সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তিনি সেই পাহাড় কাটা বন্ধ করে দেন। আদালতের নির্দেশে এখনও পাহাড়কাটা বন্ধ রয়েছে। অজিত মাহাতর নেতৃত্বে পাহাড় কাটা বন্ধ হওয়ায় এলাকার মানুষ তাঁকে সাধুবাদ জানিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই কুড়মি সমাজের একটা বড় অংশের সমর্থন যে তিনি নিজের দিকে টেনে আনবেন, সেটাই অনুমেয়।
তবে ঘটনা এটা যে, পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা কুড়মি প্রধান গ্রামগুলিতে এবারের নির্বাচনে তৃণমূল থেকে শুরু করে বিজেপি কেউ তেমনভাবে প্রচার করতে পারেনি। করতে পারেনি ছোট ছোট সভাও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কুড়মিদের ভোটকে গুরুত্ব দিতে বিধানসভা এলাকায় নেতৃত্বরা তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ একটি কথাও বলেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জনসভা করেছিলেন পুরুলিয়ার বুকে। কিন্তু তাঁদের মুখেও কুড়মিদের নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়নি। বিজেপির দাবি, মানুষ জানে লোকসভা ভোট হল দেশ গঠনের নির্বাচন। নির্বাচনে মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে দেখেই ভোট দিয়েছে। কুড়মিদের নির্দল প্রার্থী থাকা এই নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। কুড়মিদের বেশিরভাগই বিজেপিকে সমর্থন করেছে। আবার তৃণমূলের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী উন্নয়ন দেখে ভোট হয়েছে। তাই মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দিয়েছে। এই দ্বিমুখী লড়াইয়ের মাঝে থাকা কুড়মি সমাজের প্রার্থী অজিতবাবুর দাবি, প্রচারে গিয়ে প্রচুর সাড়া পেয়েছিলাম। কুড়মি সমাজ বাদে অন্যান্য সমাজ থেকেও প্রচুর ভোট পেয়েছি।