কলকাতা হাইকোর্টে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের শুনানি প্রক্রিয়া বয়কট
নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৮৬০ সালে তৈরি ভারতীয় দণ্ডবিধি বা Indian Penal Court এবার অতীতের পথে। পরিবর্তে সেই জায়গায় লাগু হয়েছে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা(BNS)। এদিন থেকেই সেই আইন লাগু হয়েছে। আবার ১৮৯৮ সালে লাগু হওয়া ফৌজদারি বিধি বা Criminal Procedure Act’র বদলে এদিন থেকে লাগু হয়েছে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা(BNSS)। একই সঙ্গে এদিন থেকেই লাগু হয়েছে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম(BSA) যা ১৮৭২ সালের ভারতীয় সাক্ষ্য আইন বা Indian Evidence Act-কে বাতিলের পথে ঠেলে দিয়েছে। এই ৩ নয়া ফৌজদারি আইন চালুর প্রতিবাদে এদিন কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) শুনানি প্রক্রিয়া(Hearing Process) বয়কট(Boycott) করলেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা(TMC Minded Lawyers)। এদিন তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের কোনও এজলাসেই শুনানির সময় উপস্থিত হননি। অধিকাংশ মামলায় রাজ্য সরকারের আইনজীবীদেরও দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
এদিন থেকে লাগু হওয়া ৩ নতুন আইনে কোন কোন অপরাধ এবং তার শাস্তি হিসাবে কী বলা হয়েছে, তা নিয়ে ধন্দে আছেন অনেকেই। নতুন ৩ আইনের একাধিক আপত্তির দিক তুলে ধরেছে দেশের বিরোধী দলগুলিও। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এই ৩ আইনকে ‘নির্মম এবং অসাংবিধানিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছে। নয়া ৩ ফৌজদারি আইন নিয়ে সোমবার সরব হয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরাও। আদালতের শুনানি প্রক্রিয়া বয়কট করেছেন তাঁরা। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে একাধিক মামলা শুনানির জন্য ডাকা হলেও আইনজীবীদের এক পক্ষ এজলাসে হাজির হননি। একই অবস্থা দেখা যায় বিচারপতি অমৃতা সিন্হা, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য, বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েক এবং বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরীর এজলাসেও। বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বসার পরেও উঠে যায়। এ ছাড়াও অনেক মামলায় আইনজীবীরা উপস্থিত না হওয়ায় শুনানি না করেই ফিরে যান হাইকোর্টের অনেক বিচারপতি। শুনানি না হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মামলাকারীরাও ফিরতে বাধ্য হন।
নতুন আইনের বিরোধিতা করে তৃণমূলের আইনজীবী বিশ্বব্রত বসুমল্লিক জানিয়েছেন, ‘আইনজীবীরা ওই ৩ আইন মেনে নিলে বিচার ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে। আইনজীবীদের মতামত ওই আইনে প্রতিফলিত হয়নি। একতরফা ভাবে ওই আইন পাশ করানো হয়েছে। এই আইন কেন্দ্রীয় সরকারের সংশোধন করা উচিত।’ উল্লেখ্য, নয়া ৩ ফৌজদারি আইন সমর্থন না করলেও আদালতের শুনানি চলতে দেওয়া উচিত বলে দাবি করছেন বামপন্থী আইনজীবীরা। আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমরাও এই আইনকে সমর্থন করি না। তবে এই ভাবে কোর্ট বয়কট করার বিরোধিতা করছি। এক দিন কোর্ট বয়কট করে মোদি সরকারের এই আইনগুলিকে রোখা যাবে না। উপযুক্ত জায়গায় প্রতিবাদ জানাতে হবে।’ এর পাশাপাশি এই ৩ আইনে পুলিসকে ইচ্ছেমতো গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে। ইতিমধ্যেই ৩ ফৌজদারি আইনের বিরোধিতায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সূত্রের দাবি, ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘এটা মোদির আরও এক স্বৈরাচারী পদক্ষেপ। পুলিসি রাষ্ট্র তৈরির দিকে এগচ্ছে ওরা।’