পাহাড়ে উপচে পড়া পর্যটকদের ভিড় বলে দিচ্ছে ফল কী হতে চলেছে, দাবি জোড়াফুলের
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা তথা দেশের বুকে ভোটপর্ব সম্পূর্ণ ভাবে মেটার আগেই দার্জিলিংয়ের(Darjeeling) বুকে আছড়ে পড়েছে লাখো পর্যটকের ভিড়(Rush of Tourists)। সেই ভিড়ে যেমন এ রাজ্যের বাসিন্দারা আছেন তেমনি আছেন ভিন রাজ্যের মানুষেরা। আছেন বিদেশীরাও। সেই ভিড়ের বহর এমনই যে হাজারের বেশি মানুষকে হোটেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে সারা রাত বাইরে কাটিয়ে পরের দিন সকালে নীচে নেমে আসতে হয়েছে। কার্যত দার্জিলিংয়ের বুকে এমন ভিড় কে কবে শেষ দেখেছে তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। তবে এই ভিড়ের ছবি বলে দিচ্ছে, পাহাড়ে শান্তি স্থাপন করে উন্নয়নের জয়ডঙ্কা উড়িয়ে দিতে সম্পূর্ণ ভাবে সক্ষম হয়েছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। আমজনতা থেকে পর্যটকদের মধ্যে ফের দার্জিলিংকে ঘিরে আবেগ ভালবাসা ভেসে উঠেছে। দার্জিলিং যে এখন তাঁদের জন্য নিরাপদ বিচরণ স্থল সেই বোধটা এখন আর হেঁকে ডেকে বলে দিতে হচ্ছে না কাউকে। আর হিমালয়ের রানীর বুকে পর্যটকদের এহেন ঢল দেখে খুশি পাহাড়ের হোটেল ব্যবসায়ী থেকে পর্যটন ব্যবসায়ী, দোকানদার থেকে গাড়ির ড্রাইভাররা। খুশ আমজনতাও। আর সেই ছবি দেখেই এবার জোড়াফুল শিবিরের দাবি, দার্জিলিংয়ের বুকে পরিবর্তন নেমে আসছে।
পরিবর্তন কিসের? পরিবর্তন দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ পদের পাশাপাশি দলগত ভাবে দখলদারিরও। ২০০৯ সাল থেকে দার্জিলিং রয়েছে বিজেপির দখলে। বাংলার বুকে আর কোনও লোকসভা কেন্দ্র এতদিন ধরে টানা বিজেপির দখলে নেই। ২০০৯ সালে এইন আসনে বিজেপি জিতেছিল বিমল গুরুং এবং তাঁর দল গোর্খা মুক্তিমোর্চার সমর্থনে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও সেই সমর্থন বহাল ছিল। কেননা পাহাড়ের মানুষের দাবি ছিল পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য। সেই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল বিজেপি। যদিও সেই আশ্বাস তাঁরা রাখতে পারেনি। এবারেও গুরুং আর তাঁর দল রয়েছেন বিজেপির পাশেই। কিন্তু এখন পাহাড় আর গুরুংয়ের হাতের মুঠোয় নেই। পাহাড়ে গুরুংরাজ এখন অতীত। বরঞ্চ সেখানে ক্রমশই রাজত্বপাট জাঁকিয়ে বসছেন অনীত থাপা(Anit Thapa)। তিনি এখন জিটিএ’র চেয়ারম্যান। তাঁর দল এবার দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছে। তার থেকেও বড় কথা অনীত জোর দিয়েছেন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য অপেক্ষা পাহাড়ের ও পাহাড়বাসীর উন্নয়নের দিকে। নজর দিয়েছেন পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়নের স্রোত বজায় রাখার দিকেও। আর এই দিক থেকে তিনি পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে।
দুই তরফের এই প্রচেষ্টাই পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছে ও তা অক্ষুণ্ণ রেখেছে। বাংলার আমজনতা থেকে শুরু করে ভিন রাজ্যের বাসিন্দা মায় বিদেশীরাও দেখেছেন গত কয়েক বছরে যে পাহাড় এখন ক্রমশ শান্ত হয়ে যাচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা আবার হাসছে। পাহাড় যে এখন পর্যটকদের জন্য নিরাপদ, সেটা তাঁরা দূরে থেকেও বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা উপলব্ধি করেছেন, পাহাড়ে এখন শান্তি বিঘ্নিত হতে দেবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনীত থাপা। আর তাই চোখ বুজে গরমের দাবদাহ এড়াতে তাঁরা সপরিবারে, বন্ধুবান্ধব মিলে ভিড় জমিয়েছেন হিমালয়ের রানীর কোলে। আর সেই ভিড় দেখিয়েই জোড়াফুল মানে তৃণমূল(TMC) নেতৃত্বের দাবি, পাহাড়ে শান্তি ফিরতেই পর্যটকদের ঢল নেমেছে। আর পর্যটক আসা মানেই চাঙ্গা পাহাড়ের অর্থনীতি। তাই কোনও পাহাড়বাসীই আর চাইবেন না পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের নামে তাণ্ডবলীলা ফের নেমে আসুক পাহাড়ের বুকে। তাঁরা শান্তি আর উন্নয়নের স্বপক্ষেই ভোট দেবেন ও দিয়েছেন। পাহাড়ে এবার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। যদিও বিজেপি(BJP) নেতৃত্বের আশা, এবারেও পাহাড়ে পদ্মফুলই ফুটবে।