নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকেই মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে দুর্গাপুরে ঘর গোচ্ছাছে তৃণমূল
নিজস্ব প্রতিনিধি: শেষবার ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালে। সেই নির্বাচনে পুরনিগমের ৪৩টি ওয়ার্ডেই জয়ী হয়েছিল বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। নিয়মমাফিক ২০২২ সালে আবারও পুরনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কবে হবে কেউই তা জানে না। তবুও সেই নির্বাচন ঘিরে আশার আলো দেখা দিল রাজ্যের ইস্পাতনগরী তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম মহকুমা শহর দুর্গাপুরের(Durgapur) বুকে। নেপথ্যে, পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা জেলারই পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর(Narendranath Chakrabarty) ভোটারকার্ডের জন্য আবেদন জানানোর ঘটনা। সেই ভোটারকার্ড করার জন্য দুর্গাপুরের স্টিল টাউনশিপের A-Zone’র অরবিন্দ রোডের ৭/১ নম্বর কোয়ার্টারের ঠিকানা ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই বাড়িতেই রয়েছে তৃণমূলের নতুন পার্টি অফিস। আর সেই ঘটনা ঘিরে এখন অনেকেই মনে করছেন সম্ভবত নরেন্দ্রনাথকে ঘিরেই দুর্গাপুরে পুরনির্বাচনের(DMC Election) ঘুঁটি সাজাচ্ছে জোড়াফুল শিবির। সেক্ষেত্রে নরেন্দ্রনাথকেই তুলে ধরা হতে পারে শহরের পুরনিগমের মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে।
দুর্গাপুর চিরাচরিত ভাবে বামে ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত। ২০১৭ সালের পুরনির্বাচনে সেই শহরেই থাকা ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে সবকটিতেই জয়ী হয় তৃণমূল। কিন্তু উনিশের লোকসভা ভোটে দুর্গাপুর পুরসভা এলাকা থেকে লিড পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী এস এস আলুওয়ালিয়া। শহরের ৩০টিরও বেশি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। একুশের ভোটে দুর্গাপুরের ২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১টি গিয়েছিল বিজেপির হাতে, অপরটি গিয়েছিল তৃণমূলের হাতে। সদ্য সদ্য হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে আবারও দেখা যাচ্ছে শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩টি ওয়ার্ডেই লিড তুলেছে বিজেপি। মাত্র ১০টি ওয়ার্ডে লিড পেয়েছে তৃণমূল। এই অবস্থায় তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব দ্রুত এই শহরে পুরনির্বাচনের পথে হাঁটবে না রাজ্য সরকার। বরঞ্চ শহরের ওয়ার্ড ধরে ধরে সংগঠন সাজানোর দিকে নজর দেওয়া হবে। যে সব ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটে দল পিছিয়ে পড়েছে সেখানে খামতি কোথায় তা খুঁজে বের করা হবে। তারপর ভোটের পথে এগোবে জোড়াফুল শিবির। আর এই সংগঠন সাজানো আর খামতি খুঁজে বের করার জন্যই মাঠে নামানো হচ্ছে নরেন্দ্রনাথকে।
প্রশ্ন কেন নরেন্দ্রনাথ, অন্য কেউ নন? নরেন্দ্রনাথ শুধু পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতিই নন। তিনি দলের বিধায়কও। দুর্গাপুরের বিধায়ক না হলেও দুর্গাপুর লাগোয়া পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তিনি। তাই শহরে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। তাছাড়া লোকসভা নির্বাচনে(Loksabha Election 2024) আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহা ও বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে কীর্তি আজাদকে জেতানোর দায়িত্ব ছিল নরেন্দ্রনাথের ওপর। দুই প্রার্থীই ভালো মার্জিনে জয় পেয়েছেন। বিশেষ করে শত্রুঘ্ন সিনহার জয়ে নরেন্দ্রনাথের ভূমিকা চোখে পড়েছে মানুষের। বহু সময়েই দেখা গিয়েছে, প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে মানুষের দোরে গিয়ে ভোট চেয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। সেই হিসাবে শহরের বুকে ইতিমধ্যেই তিনি বেশ ভালই জনসংযোগ সেরে ফেলেছেন। আর তাই তাঁকেই হয়তো সামনে রেখে দুর্গাপুরের পুরভোটের ঘুঁটি সাজাতে চাইছে তৃণমূল। এই বিষেয় নরেন্দ্রনাথ নিজে জানিয়েছেন, ‘দল এখনও পর্যন্ত যা দায়িত্ব দিয়েছে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। আগামী দিনেও করব। পুর নির্বাচনে বিরোধীরা কোনও ফ্যাক্টর হবে না। লোকসভা নির্বাচনের ফল থেকেই পরিষ্কার মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে। তাছাড়া দুর্গাপুরের দু'টি কেন্দ্র মিলিয়ে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির লিড ছিল প্রায় ৭৬ হাজার ভোট। এবার সেই ব্যবধান অনেকটাই কমে গিয়েছে।’