আরাবুল জমানায় ইতি টেনে দিল তৃণমূল, কাড়া হল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ
নিজস্ব প্রতিনিধি: বড় ধাক্কা জেলবন্দী তৃণমূল(TMC) নেতা আরাবুল ইসলামের(Arabul Islam)। ভাঙড়ের প্রাক্তন এই তৃণমূল বিধায়ক গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে হয়েছিলেন ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কিন্তু লোকসভার ভোট মিটতেই আরাবুলকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দিল তৃণমূল। মঙ্গলবার ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের(Bhangar) বিজয়গঞ্জ বাজারে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডাকেন ক্যানিং পূর্ব তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা(Showkat Molla)। সেই বৈঠকেই দলীয় সিদ্ধান্তের কথা স্থানীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন তিনি। বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীর্ঘ দিন না থাকায় কাজকর্মে অসুবিধা হচ্ছে। তাই তাঁর বদলে পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সোনালি বাছাড়কে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সহ-সভাপতির দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। সূত্রের খবর, জেল থেকে ছাড়া পেলেও আরাবুলকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে ফেরানো হবে কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও কথা জানাননি শওকত।
চলতি বছর ৮ ফেব্রুয়ারি তোলাবাজির অভিযোগে ঘটনায় আরাবুলকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। সেই থেকেই জেলবন্দি তিনি। এ বার তাঁর অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। দলগত ভাবে আরাবুলের এখন আর দলের কোনও পদে নেই। কারণ, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাঙড় বিধানসভার ‘আহ্বায়ক’ পদ দেওয়া হয়েছিল আরাবুলকে। সেই পদ থেকে এপ্রিল মাসে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে আরাবুল দলের আর কোনও সাংগঠনিক বা প্রশাসনিক দায়িত্বে নেই। এখন তিনি শুধু তৃণমূলের একজন কর্মী। আর তার জেরেই ভাঙড়ে এখন বেশ খুশির হাওয়া। অনেকেই মনে করছেন ভাঙড়ে এবার ‘আরাবুল জমানা’য় ইতি পড়ে গেল। সব থেকে বড় কথা, আরাবুলের আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে নিজেই জানিয়েছেন যে, পুলিশি হেফাজতে রেখেই একের পর এক মামলায় যুক্ত করা হচ্ছে আরাবুলকে। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের এই ‘তাজা নেতা’র ভবিষ্যৎ যে এখন অন্ধকারে তা তাঁর অনুগামীরাও বুঝতে পারছেন।
২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভাঙড় ছিল বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত। সেই ভোটে তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসু ভাঙড় থেকে ৫২ হাজারের বেশি ভোটে পিছিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙড় আসনে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন আরাবুল। সেই ভোটে বামফ্রন্টের ২৩৫ আসন জয়ের মধ্যেও ভাঙড়ে আরাবুলের জয় তৃণমূলের কাছে ছিল বড় প্রাপ্তি। সেই থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে আসেন আরাবুল। কার্যত তখন থেকেই ভাঙড়ে ‘আরাবুল জমানা’র সূত্রপাত। অধুনা জেলবন্দি নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরাবুলকে ‘ভাঙড়ের তাজা নেতা’ বলে আখ্যা দেওয়ার পরে দলের অন্দরে ভাঙড়ের বিধায়কের ‘প্রতাপ’ আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের দলের মধ্যেও অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন আরাবুল। সেই ঘটনার জেরে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়জয়কার হয়ে রাজ্যে পালাবদল হলেও ভাঙড়ে পরাজিত হন আরাবুল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙড় তৃণমূলের দখলে এলেও একুশের ভোটে তা আবারও হাতছাড়া হয়েছে।