‘জনমুখী’ এবং ‘জীবিকানির্ভর’ প্রকল্পগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব রাজ্য বাজেটে
নিজস্ব প্রতিনিধি: আর কয়েক ঘন্টা মাত্র অপেক্ষা। তারপরেই রাজ্য বিধানসভায়(West Bengal State Assembly) পেশ হবে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেট। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য(Chandrima Bhattacharya) সেই বাজেট পেশ করবেন। রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট প্রকট হলেও রাজ্যবাসীর পাশে থাকার দায়বদ্ধতা থেকে সরতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাই তাঁর দেখানো পথে হেঁটেই এবার রাজ্যের স্বাধীন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী হিসাবে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বাজেট পেশ করতে চলেছেন এদিন। সেই বাজেটে ‘জনমুখী’(Peoples Budget) এবং ‘জীবিকানির্ভর’ প্রকল্পগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। আর সেই কারণেই শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মমতার চালু করা আর্থসামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির বরাদ্দ বৃদ্ধির পথেই হাঁটতে চলেছে রাজ্য সরকার। প্রকল্পগুলির পরিধি আরও প্রসারিত করে রাজ্যবাসীর হাতে নগদের জোগান বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা হতে পারে এবারের বাজেটে। এমনকি রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু নয়া প্রস্তাব থাকতে পারে চন্দ্রিমার বাজেটে।
আরও পড়ুন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিষেবা না দেওয়ায় ১০ কোটির বেশি জরিমানা ৫৩ হাসপাতালকে
নবান্ন(Nabanna) সূত্রে জানা গিয়েছে রাজ্যের আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় প্রতিটি দফতরের বরাদ্দই প্রায় ১০ শতাংশ করে বৃদ্ধি হতে পারে এবারের রাজ্য বাজেটে। তবে সেক্ষেত্রে সমাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে, এমন দফতরগুলির বরাদ্দ বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধু, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, জয় বাংলা, জয় জোহরের মতো প্রকল্পগুলি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। তাই এই সব প্রকল্পের টাকা যে সব দফতর বরাদ্দ করে সেই সব দফতর এদিনের বাজেটে বাড়তি টাকা পেতে চলেছে বলেই জানা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যের খরচও বাড়বে স্বাভাবিকভাবে। তবে রাজ্য সরকারের লক্ষ্য, মানুষের ওপর কোনও বাড়তি বোঝা না চাপিয়ে রাজস্ব খাতে আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। আর সেই কারণেই এদিনের বাজেটে আগামী অর্থবর্ষের জন্যও জমি-বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা হতে পারে। পাশাপাশি, পরিবহণ ক্ষেত্রে কর-কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন এনে রাজ্য সরকার আয় বৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত ভোটের মুখে টানা রাস্তা অবরোধের ডাক জঙ্গলমহলে
১০০ দিনের কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। এর ফলে গ্রামেগঞ্জে বহু অদক্ষ শ্রমিক নিয়মিত উপার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের জন্য বিকল্প কাজের সুযোগ তৈরি করতে বাজেটে কোনও বিশেষ ঘোষণা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর। শিল্পক্ষেত্রে রাজ্যের লক্ষ্য ইকোনমিক করিডর গড়ে তোলা। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে আগামী অর্থবর্ষে মূলত ক্ষুদ্র শিল্পে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেই নিরিখে আজকের বাজেটে বিশেষ কোনও ঘোষণা থাকে কি না, সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে বণিকসভাগুলি। পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ভালো পরিমাণ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব আসতে পারে বলে আশাবাদী তাঁরা। সম্প্রতি রাজ্যের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিকে পুরস্কৃত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে প্রশাসন। তাই আগামী বছর আরও বেশি সময়ের জন্য ‘দুয়ারে সরকার’ চালু রাখার বিষয়টি বাজেটে উঠে আসতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সীমিত আয়ের মধ্যে বাড়তে থাকা খরচ, ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং রাজকোষের ঘাটতি চিন্তায় রেখেছে সরকারকে। রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্থির করে দেওয়া বিধির চাপও। তা ছাড়া বেতন-পেনশন, ঋণ শোধ, প্রশাসনিক খরচ, দফতর-ভিত্তিক বরাদ্দের মতো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেও খরচ জুগিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। তবে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজস্ব-ঘাটতির ফলে আয় তেমন ভাবে বাড়েনি। তাই ঋণ নেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা যায়নি। গত কয়েক বছরে রাজ্যের রাজকোষ-ঘাটতি ক্রমশ বেড়েছে। চলতি আর্থিক বছরের (২০২২-২৩) বাজেটে তা ৩.৬৪ শতাংশে ধরে রেখেছিল রাজ্য। তাই সব্দিক দিয়েই এদিনের বাজেট চন্দ্রিমার কাছে তো বটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাছেও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে।