মাটির নীচে বিপদ বাড়ছে, তলিয়ে যাবে বৃহত্তর কলকাতা
নিজস্ব প্রতিনিধি: বড় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে বৃহত্তর কলকাতা(Greater Kolkata)। তার মধ্যে শুধু শহর কলকাতাই নেই, আছে সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন, মধ্যমগ্রাম, বারাসত, দমদম, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল, হাওড়া এবং হুগলি শিল্পাঞ্চলও। আছে বজবজ, মহেশতলা, পূজালি, সোনারপুর, বারুইপুরের মতো এলাকাও। এই সব এলাকার মাটির নীচে ঘনাচ্ছে বিপদ। একদিকে আগ্রাসী নগরায়ণ, বহুতলের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে ক্রমশ কমতে থাকা ভূগর্ভস্থ জলস্তর। আর তার জেরেই এই বিশাল এলাকাজুড়ে যে কোনও সময় বড়সড় ধস নেমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কার্যত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে এই এলাকা। এমনই ভয়ঙ্কর তথ্য উঠেছে এক গবেষণাপত্রের(Research Paper) মাধ্যমে। International Organization of Scientific Research নভেম্বর মাসে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে যেখানে এই ভয়ঙ্কর বিপদের কথা বলা হয়েছে।
ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বৃহত্তর কলকাতার মাটির নীচে একটা বড় অংশ ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে। আর তার জেরে ওই সব এলাকা একসময়ে হয়তো পুরো ধসে পড়বে। চলে যাবে জলের তলায়! সব থেকে বড় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে আছে কলকাতা ও হাওড়া এই দুই যমজ শহর। জানা গিয়েছে, International Organization of Scientific Research নভেম্বর মাসে ‘Calcutta, The City on the Cradle’ নামের যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে তার রচয়িতা ভূবিজ্ঞানী(Geologist) সুজীব কর এবং অন্যান্যরা। সেখানেই বলা হয়েছে, কলকাতার লাগোয়া ব-দ্বীপের উৎপত্তি ও বিকাশ গত ২ হাজার বছর যাবৎ হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নবীন ব-স্বীপ হওয়ায় কলকাতার মাটির স্তর নরম। কলকাতার বিকাশ তিন শতকের কিছু বেশি সময় ধরে। কিন্তু তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ নামক বুলডোজ়ার সাম্প্রতিক কালে বিধ্বংসী ভূমিকা নিয়েছে। পৃথিবীর নানা অংশে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে হিমশৈল গলে যাওয়ায় সমুদ্রে জলস্তরের উচ্চতা বাড়ছে। কলকাতা লাগোয়া তটভূমিও তার ব্যতিক্রম নয়। নোনা জল ঢোকার প্রবণতা বেড়েছে। হুগলি নদীতে। সেখানে জলস্তরও বাড়ছে। সাগরের জোয়ারের তোড়ও বাড়ছে। ঘন ঘন সাইক্লোন হচ্ছে।
গবেষকদের মতে, এখানেই অশনি সঙ্কেত মিলছে। সমুদ্রস্তর বেড়ে যাওয়ায় তটবর্তী এলাকাগুলি ডুবে যাওয়াই স্বাভাবিক পরিণতি। এই তটভূমি কলকাতা থেকে খুব একটা দূরে নয়। ফলে কলকাতার কপালেও দুঃখ অনিবার্য। ভাগিরথী বা গঙ্গার জল বহনের ক্ষমতা ছাপিয়ে যাওয়ায় নদীর তীর ভেঙেও জনপদ বিপণ্ণ করছে। আজকাল বেলুড় বা হাওড়ার নানা অংশে জোয়ারের জলে রাস্তা প্রায়ই ডুবে যাচ্ছে। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭.৩৩ মিটার উঁচুতে ছিল। সম্প্রতি তা নেমে এসেছে ৪.৩৬ মিটারে। গবেষণাপত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, মাটির তলা ফাঁপা হয়ে যাওয়া ও ক্রমেই জলস্তর নেমে যাওয়ায় ডায়ারিয়া ও আর্সেনিক দূষণের বিপদও দিনের পর দিন বাড়ছে। কলকাতায় তাপমাত্রার পারদ বাড়ার কারণে শহরের বুকে Heat Island সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণাপত্রে সমাধানের রাস্তা হিসেবে বলা হয়েছে, কলকাতার ভূস্তরের ভার বহনের ক্ষমতা বুঝে নির্মাণ সংক্রান্ত নিয়মকানুন কড়া হাতে বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। অপরিকল্পিত উন্নয়ন বা নির্মাণ ও মাটির তলা থেকে নির্বিচারে জল তোলা বন্ধ করে বিকাশের পথ খুঁজতে হবে।