২০৯ বছরের বলি প্রথা বন্ধ হচ্ছে হংসেশ্বরী মন্দিরে
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঁশবেড়িয়ার(Bansberia) বলতেই যে নামটা সবচেয়ে আগে মনে আসে তা হল হংসেশ্বরী মন্দির। ২০৯ বছর আগে তন্ত্রসাধনা ও ষটচক্রভেদ তত্ত্বের ভিত্তিতে বাঁশবেড়িয়ায় গড়ে উঠেছিল হংসেশ্বরী মন্দির। ৭০ ফুট উচ্চতার এই ছ’তলা মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী হংসেশ্বরী দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব থেকে শুরু করে কত সাধক ও ভক্ত যে হংসেশ্বরীর মায়ের টানে এখানে ছুটে এসেছেন যুগে যুগে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই।
এখানে পুজো পাঠ হয় তন্ত্রমতে। ছাগল বলির পাশাপাশি বলি দেওয়া হত মোষও। তবে এবার ছেদ পড়তে চলেছে ২০৯ বছর ধরে চলে আসা বলিপ্রথায়। এবার থেকে বলিপ্রথা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুজোর দায়িত্বে থাকা রাজ পরিবারের সদস্যরা। কালীপুজোয়(Kali Puja) এখানে রাজকীয় আয়োজন। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তেরা ছুটে আসেন মা হংসেশ্বরীকে দেখবেন বলে। পুজোয় মায়ের ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, নানা ব্যঞ্জন, পায়েস, পাপড় ও চাটনি। ভক্তদের কাছে তিনি মা বিপত্তারিণী।
সারা বছর এই মন্দিরে হংসেশ্বরী মাকে দক্ষিণা কালী রূপে পূজা করা হয়। কিন্তু কালীপুজোর(Diwali) দিন মাকে তন্ত্রমতে পুজো করা হয় এখানে। পুজোর সময় মা হংসেশ্বরীকে পরানো হয় ফুলের রাজবেশ। কালীপুজোর দিন সন্ধে থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত মা এই রূপে বিরাজ করেন।
১৭৯৯ সালে ধর্মপ্রাণ রাজা নৃসিংহদেব রায় দুর্গের মধ্যেই মা হংসেশ্বরীর মন্দির(Hanseshwari Temple) তৈরি শুরু করেন। ১৮০২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর মন্দির তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাজার মন্দির তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেন তাঁর স্ত্রী রানি শঙ্করী। ১৮১৪ সালে সম্পন্ন হয় মন্দির তৈরির কাজ।
এখন এই মন্দির ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন। মন্দিরের ১৩টি চূড়া, ত্রিতলে কষ্টিপাথরের ১২টি শিবলিঙ্গ, গর্ভগৃহে পাথরের বেদির উপর সহস্রদল ও অষ্টদল পদ্মের আসন। তার উপরেই শায়িত মহাদেব। তাঁর হৃদয় থেকে উত্থিত পদ্মাসনে অধিষ্ঠান মা হংসেশ্বরীর। এখানে মন্দিরের গর্ভগৃহকে ধরা হয় মূলাধার। এই মূলাধারে সহজ সরল পথের উপর রয়েছে অষ্টদল পদ্ম। তন্ত্রমতে মানবদেহের পাঁচটি নারীর মতো এই মন্দিরে রয়েছে পাঁচটি সিঁড়ি। কথিত আছে, যেকোনও একটি সিঁড়ি ধরে এগোলেই গোলকধাঁধায় হারিয়ে যায় মানুষ।